ভালো ফলের পাশাপাশি বিবেকবান মানুষও হতে হবে

একেএম ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এইচএসসিতে জিপিএ–৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন অতিথি ও শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। ঢাকা, ১৭ নভেম্বর
ছবি: জাহিদুল করিম

যাঁরা ভালো ফল করেছেন, তাঁরা শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবলে চলবে না, দেশের কথাও ভাবতে হবে। একই সঙ্গে ভালো ও বিবেকবান মানুষ হয়ে উঠতে হবে। সম্মান ও সততার সঙ্গে কাজ করার প্রস্তুতি নিতে হবে। নিজেদের উন্নতির পাশাপাশি কীভাবে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেই চিন্তাও থাকতে হবে কৃতী শিক্ষার্থীদের।

আজ সোমবার বিকেলে ঢাকার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণে ‘জিপিএ-৫ কৃতী সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বিশিষ্টজনেরা এ আহ্বান জানান। ঢাকা–৪ (শ্যামপুর, কদমতলী) ও ঢাকা–৫ সংসদীয় আসনের (যাত্রাবাড়ী–ডেমরা) বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজক একেএম ফাউন্ডেশন, সহযোগিতায় ছিল প্রথম আলো।

একেএম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান মোল্লা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি কৃতী শিক্ষার্থীদের নম্রতা, ভদ্রতা ও শালীনতার মাধ্যমে মানবিক মানুষ হয়ে ওঠার আহ্বান জানান। যাঁরা ভালো ফল করেছেন, তাঁরা শুধু নিজেদের নিয়েই ভাববেন না। দেশ ও দশের জন্য কাজ করতে হবে শিক্ষার্থীদের।

মাতুয়াইল–শ্যামপুর–ডেমরা অঞ্চল একসময় শুধুই শিল্পাঞ্চল ছিল বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান মোল্লা। তিনি বলেন, সবাই মিলে এই এলাকাকে শিল্পাঞ্চল থেকে এখন ‘শিক্ষাঞ্চল’ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখানে সমবেত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভবিষ্যতে কেউ শিক্ষক, অধ্যাপক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, প্রশাসক, সাংবাদিক হবেন। তাঁদেরকে সম্মান ও সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। নিজের উন্নতি করার পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকে এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে কৃতী শিক্ষার্থীদের।

এইচএসসিতে জিপিএ–৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একেএম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাহবুবুর রহমান। ঢাকা, ১৭ নভেম্বর
ছবি: জাহিদুল করিম

বাবা, মা ও শিক্ষকদের অবদান সব সময় স্মরণ রাখতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান মতিউর রহমান। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, এই মানুষেরাই জীবনের ভিত্তি গড়ে দেন।

আগামী দিনেও মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ এবং সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের সঙ্গে প্রথম আলোর যৌথতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে মতিউর রহমান বলেন, সব ভালো কাজে প্রথম আলো যুক্ত থাকবে।

কৃতী শিক্ষার্থীদের চীনে পড়তে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান ঢাকার চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সিলর লি শাওফেং। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো চীনেরও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। প্রযুক্তি, উদ্ভাবনে চীন বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশ। চীন সরকার বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ টিউশন ফি, আবাসনসুবিধা, চিকিৎসা বিমা, মাসিক ভাতাসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ দিয়ে থাকে।

মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের প্রধান উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী বলেন, এবার সারা দেশেই শিক্ষার্থীরা খারাপ ফল করেছেন। কিন্তু এই অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অনেক ভালো করেছেন। আগামী দিনেও এই ফল অব্যাহত থাকুক।

কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকার চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সিলর লি শাওফেং। ঢাকা, ১৭ নভেম্বর
ছবি: জাহিদুল করিম

শুধু ভালো ফল নয়, শিক্ষার্থীদের বিবেকমান মানুষ হওয়ার আহ্বান জানান একেএম ফাউন্ডেশনের কো–চেয়ারম্যান আফরোজা রহমান। তিনি বলেন, শুধু জিপিএ-৫ পেলেই হবে না, জীবনে ভালো ও বিবেকবান মানুষ হতে হবে। তাহলে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো পৃথিবীটাই বদলে যাবে।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ডেমরাসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের একেএম ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। পরে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মোল্লার হাতে শিল্পী শহীদ কবিরের আঁকা দুটি চিত্রকর্ম (এচিং প্রিন্ট) তুলে দেন সম্পাদক মতিউর রহমান। দুটি চিত্রকর্মের একটি ছিল কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতি। অন্যটি ছিল জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে আঁকা শিল্পকর্ম (পুলিশের গুলির মুখে হাত প্রসারিত করে বুক পেতে আবু সাঈদ যেভাবে দাঁড়িয়েছিলেন)।

অনুষ্ঠানে জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে একেএম ফাউন্ডেশনের পরিচালনায় ‘টার্নিং পয়েন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ নামে নতুন একটি স্কুলেরও উদ্বোধন করা হয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে ছিল মাহবুবুর রহমান মোল্লা ও সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।