রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ১৫ সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি 

একসঙ্গে এতগুলো সড়কে কাটাকাটি ও খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বাসিন্দাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

পয়োনিষ্কাশনের কাজ করার জন্য সড়ক খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এতে বিপাকে এলাকাবাসী ও চলাচলকারীরা। গতকাল বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডেছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার নূরজাহান রোড। আসাদ অ্যাভিনিউ ও তাজমহল রোডকে যুক্ত করা সড়কটি প্রায় ৫৫০ মিটার দীর্ঘ। সড়কটিতে পয়োনালা নির্মাণের কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

ফলে গতকাল মঙ্গলবার এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। বাধ্য হয়ে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি তাজমহল রোডের দিকে যেতে কিছু দূর যাওয়ার পর রাস্তা বদলে উঠতে হচ্ছে পাশের রাজিয়া সুলতানা সড়কে।

তবে সড়কটি নূরজাহান রোডের চেয়ে অপেক্ষাকৃত সরু। পাশাপাশি দুটি ব্যক্তিগত গাড়িও (প্রাইভেট কার) এই সড়কে ঠিকমতো চলতে পারে না। দুটি গাড়ি মুখোমুখি হলেই যানজট লেগে যায়। এই যানজট দীর্ঘ হয়ে ঠেকে তাজমহল রোড কিংবা আসাদ অ্যাভিনিউ সড়ক পর্যন্ত।

নূরজাহান রোডের বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান বলেন, যেহেতু সড়কের মাঝে পাইপ বসানোর কাজ হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে এক পাশে খুঁড়ে রাখা মাটি রেখে, অন্য পাশে যান চলাচলের জায়গা রাখা যেত; কিন্তু তা না করে দুই পাশেই মাটি রাখা হয়েছে। ফলে পুরো সড়কে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

সড়কটি ঢাকা উত্তর সিটির ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। ওয়ার্ডটির কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম নিজেও সড়ক খোঁড়াখুঁড়িতে দুর্ভোগে আছেন বলে প্রথম আলোকে জানান। তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগী আমি নিজেও। সোমবার ভুল করে ওই সড়কে ঢুকে গিয়েছিলাম। গাড়ি ঘোরানো যায়নি, পেছনে যানজটও লেগে গিয়েছিল।’ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ শেষের জন্য তাগাদা দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

শুধু এই সড়কই নয়, মোহাম্মদপুর এলাকার আরও ১৪টি সড়কের কোথাও কাটাকাটি, কোথাও খোঁড়াখুঁড়ির কাজ হচ্ছে। এর মধ্যে কোনোটিতে পয়োনালা নির্মাণসহ সড়ক ও ফুটপাত উন্নয়নের কাজ করছে সিটি করপোরেশন নিজেরাই। আবার কোনো কোনো সড়কে পানির নতুন সংযোগের কাজ করছে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কাছাকাছি এলাকায় এতগুলো সড়কে একসঙ্গে কাটাকাটি ও খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বাসিন্দাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, কাটাসুর এলাকার শের-ই বাংলা রোড, সাদেক খান রোড (নামাবাজার অংশ), জাফরাবাদের শারীরিক শিক্ষা কলেজ সড়ক, জাকির হোসেন রোড এলাকার একটি সড়ক, নূরজাহান রোড (মূল রাস্তা), ইকবাল রোড এলাকার ছয়টি সড়ক, স্যার সৈয়দ রোডের (আংশিক), তাজমহল রোড এলাকার দুটি সড়ক এবং টিক্কাপাড়া এলাকার দুটি সড়কের উন্নয়নকাজ চলছে। এর মধ্যে কোনো সড়কে কাটাকাটি ও খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। কোনো সড়কে কাজ শেষে বালু ও ইটের টুকরা দিয়ে ভরাট করে রাখা হয়েছে।

বের হওয়ার পথও নেই

মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোড এলাকার ‘এ’ ব্লকে পয়োনালা নির্মাণ, সড়ক সংস্কার ও ফুটপাত উন্নয়নের কাজ হচ্ছে। এতে ইকবাল রোড মাঠের আশপাশে ছয়টি সড়কে একসঙ্গে কাটাকাটি ও খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ। ফলে বাসাবাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ারও রাস্তা পাচ্ছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা।

গতকাল ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইকবাল রোড মাঠ থেকে প্রিয়াঙ্কা কমিউনিটি সেন্টার ও প্রবর্তনার অংশ হয়ে স্যার সৈয়দ রোডে যাওয়ার রাস্তাটি আড়াআড়ি করে কাটা হচ্ছে। এ ছাড়া পাশের আরও পাঁচটি সড়কেও পয়োনালা নির্মাণের কাজ করেছে সিটি করপোরেশন। সড়কগুলো এখনো সংস্কার করা হয়নি। 

যাতায়াতের দুটি রাস্তাতেই খোঁড়াখুঁড়ি

মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বছিলা সড়কের দিকে বাঁয়ে আল্লাহ করিম মসজিদের পেছন দিয়ে শের-ই বাংলা রোড আর এর ১০০ মিটার সামনে সাদেক খান রোড। সড়ক দুটি দিয়েই মূলত লোকজন মোহাম্মদপুর থেকে কাটাসুর, কাদেরাবাদ হাউজিং, জাফরাবাদ, পুলপার ও রায়েরবাজার এলাকায় যাতায়াত করেন। এর মধ্যে শের-ই বাংলা রোডে পানির নতুন সংযোগের জন্য কাজ করেছে ঢাকা ওয়াসা। আর সাদেক খান রোডে পয়োনালা নির্মাণের কাজ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি।

ঢাকা উত্তর সিটির প্রকৌশল বিভাগ বলছে, শের-ই বাংলা রোডে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ মাটির নিচ দিয়ে খননের অনুমতি নিয়েছিল। কিন্তু তাদের ঠিকাদার খোলামেলাভাবে (ওপেন কাট) কেটেছে। যে কারণে ওই সড়ক দিয়ে চলাচলে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এদিকে শের-ই বাংলা রোডে ওয়াসার কাজ চলাকালেই গত ডিসেম্বরে সাদেক খান রোডের কাটাসুর নামাবাজার অংশে পয়োনালা মেরামতের কাজ শুরু করে ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগ। তখন ওই সড়কেও যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। 

ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগ থেকে জানানো হয়, মোহাম্মদপুরসহ ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫ এর আওতাধীন ৯টি ওয়ার্ড এলাকায় ৩১টি প্যাকেজে সড়ক ও ফুটপাত সংস্কার এবং নালা নির্মাণের কাজ চলছে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৫২ কোটি টাকা।

ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, উন্নয়নকাজের জন্য এলাকাবাসীর সাময়িক ভোগান্তি হচ্ছে। তবে কাজগুলো বর্ষার আগেই শেষ করা হবে।