মেট্রোরেলে চড়ে উচ্ছ্বসিত রাতুল, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে দেখালেন ভিডিও কলে

কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও কলে প্রিয়জনকে মেট্রোরেলের ভেতরের দৃশ্য দেখাচ্ছেন। আজ শুক্রবার সকালে।
ছবি: প্রথম আলো

বেলা ১১টা ৩ মিনিট। মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশনের তিনতলার প্ল্যাটফর্মের যাত্রীদের তখন অন্য রকম এক অপেক্ষা। সবাই দাঁড়িয়ে আছেন মেট্রোরেলে চড়বেন বলে। এর মধ্যেই হর্ন বাজিয়ে চলে এল মেট্রোরেল। সবার চোখেমুখে ফুটে উঠল বিস্ময়মাখা হাসি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে গেল ট্রেনের সব কটি দরজা। যাত্রীরা একে একে উঠলেন ট্রেনে। ভেতরে ছিমছাম সুবিন্যস্ত চেয়ার। কেউ বসে পড়লেন, কেউ আবার ঘুরে ঘুরে দেখলেন পুরো কামরা।

কিছু সময়ের মধ্যে হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে ট্রেনটি ছুটতে শুরু করল। আর তাতেই যেন আনন্দে ফেটে পড়ল চারপাশ। যাত্রীদের অনেকেই আবেগ ধরে রাখতে না পেরে চিৎকার করে উঠলেন। কেউ কেউ আসনে বসে হাততালি দিয়ে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন। মুঠোফোনের ক্যামেরায় এই মুহূর্তকে বন্দী করছেন অনেকেই। কেউ ভিডিও কলে প্রিয়জনকে মেট্রোরেলের ভেতরের দৃশ্য দেখাচ্ছেন।

আরও পড়ুন

একটি বগিতে স্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছিলেন রাতুল হাসান। উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে থাকেন তিনি। সকালে বন্ধুদের সঙ্গে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই হঠাৎ চলে এসেছেন মেট্রোরেলে চড়তে। কথা হলে রাতুল বলেন, ‘আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। ও (স্ত্রী) এখন একটা বিশেষ সময়ের মধ্য দিয়ে না গেলে অবশ্যই ওকে নিয়ে আসতাম। একসঙ্গে ট্রেনে চড়তাম। তারপরও ওর যেন একটু ভালো লাগে, তাই পুরোটা সময় ভিডিও কলে ঘুরে দেখালাম।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাধারণ যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। তবে কর্মব্যস্ততাসহ নানা কারণে অনেকেই প্রথম দিনে মেট্রোরেলে চড়ার অভিজ্ঞতা নিতে পারেননি। তাই আজ শুক্রবার ছুটির দিনে মেট্রোরেলে চড়তে বিভিন্ন বয়সের মানুষ উত্তরার দিয়াবাড়িতে হাজির হয়েছেন।

গতকাল সকাল থেকে সাধারণ যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে মেট্রোরেল।
ছবি: প্রথম আলো

সপরিবার মেট্রোরেল দেখতে এসেছেন ইকরামুল হাসান। ট্রেনের কামরায় উঠেই সবাই সেলফি তোলায় মেতে উঠলেন। ইকরাম বলেন, ‘টিভিতে মেট্রোরেল দেখে মেয়ে ঘুরতে আসার জন্য বারবার বলছিল। তাই চলে এলাম। এখন ট্রেনে চড়ে মেয়ে খুবই খুশি।’

তবে সবার মধ্যে ব্যতিক্রম ষাটোর্ধ্ব হাসান আলী। তিনি জানালার পাশে বসে আনমনে বাইরে তাকিয়ে ছিলেন। মেট্রোরেলে চড়তে গতকালও এসেছিলেন তিনি। আজ আবার এসেছেন। আগারগাঁওয়ে তাঁর কোনো কাজ নেই। তবে জানালার ফাঁক গলে বাইরের উঁচু উঁচু ভবন, ফাঁকে সবুজ গাছগাছালির ছুটে চলার দৃশ্য তাঁর ভালো লাগে। তাই তিনি আজ আবার এসেছেন বলে জানালেন।

আরও পড়ুন

হাসান আলীর সঙ্গে কথা শেষ না হতেই ট্রেন পৌঁছে গেল আগারগাঁও স্টেশনে। ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন ১১টা ১৪ মিনিট। যাত্রীদের মধ্যে একজন বললেন, ‘ধুর! শেষ হয়ে গেল?’। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আনন্দভ্রমণ শেষে ট্রেন থেকে যাত্রীরা নেমে গেলেন। সবার চোখেমুখেই তখন তৃপ্তি আর হাসির রেশ।

প্ল্যাটফর্ম থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে হাসান আলী বলেন, এখানে সবচেয়ে ভালো লেগেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবহার। তাঁরা খুব সহযোগী মনোভাবের। খুব ভালো ব্যবহার করেছেন। এটা ধরে রাখা জরুরি।