কর্মকর্তাদের নিয়ে বিদেশভ্রমণের ব্যয় বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিলেন মেয়র আতিক

রাজধানীর গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটির নগরভবনে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা, কাউন্সিলর ও সাংবাদিকদের নিয়ে সম্প্রতি অন্তত পাঁচটি দেশ সফর করেছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। চলতি মাসে চীন সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। এসব সফরের ব্যয় নিয়ে মেয়র বলেছেন, ‘আমাদের টাকায় আমরা কোনো সময় বিদেশভ্রমণ করি না। আবার আসার সময় খালি হাতেও ফিরি না। শুধু শুধু ঘুরতেও যাই না।’

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটির নগরভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মেয়র। দ্বিতীয় মেয়াদে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র হিসেবে তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় প্রতিশ্রুতি পূরণে গত তিন বছরে যেসব কাজ করেছেন এবং উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নিয়েছেন, সেসব নিয়ে কথা বলেন মেয়র।

বিদেশ সফরের প্রাপ্তি নিয়ে মেয়র আতিকুল বলেন, ‘তারাই (যে দেশে যান, ওই দেশের সরকার, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান) নিমন্ত্রণ, বিমান টিকিট ও হোটেলভাড়া দিয়ে নিয়ে যান। বিশ্বব্যাংকও তা–ই করেছিল। বরং ফেরার সময় তারা আমাদের ১৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণের বিষয়টিও নিশ্চিত করেছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি শহর থেকে মশা নিধনে বিজ্ঞানভিত্তিক ও আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেছেন উত্তর সিটির কর্মকর্তারা। ওই সফর–পরবর্তী পরিকল্পনা অনুযায়ী মশার লার্ভা নিধনে ব্যাসিলাস থুরিংয়েনসিস ইসরাইলেন্সিস (বিটিআই) নামের একটি ব্যাকটেরিয়া আমদানি করছে সংস্থাটি। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এটি দেশে আসবে বলে জানান মেয়র।

এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা মেয়রের কাছে জানতে চান, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিন বছরে তিনি যে কাজগুলো করেছেন, এসবের জন্য ১০ নম্বরের মধ্যে নিজেকে তিনি কত নম্বর দেবেন? জবাবে মেয়র বলেন, ‘১০–এর মধ্যে ১০, নাকি ১০–এর মধ্যে কত, এর উত্তর আমি নগরবাসীর হাতে ছেড়ে দিলাম। তবে কাজ তো করতে হবে। আমি চেষ্টার কোনো ত্রুটি করছি না। করোনার মধ্যেও ঘরে বসে থাকিনি। তাই নম্বর দেওয়ার বিবেচনা নগরবাসীই করবেন।’

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা উত্তর সিটির বিভিন্ন বিভাগের প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নান কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে নম্বর দিতে চেয়েছিলেন। তবে মেয়র তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনি এর উত্তর দেবেন না। এই নম্বর জনগণই দিক।’

দায়িত্ব নেওয়ার পর সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডে নাগরিক সুযোগ-সুবিধায় ঢেলে সাজানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মেয়র। কিন্তু সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়ার প্রায় ছয় বছর পরও ওই ওয়ার্ডগুলোয় তেমন উন্নয়নকাজ হয়নি। যদিও প্রায় ৩ বছর আগে নতুন যুক্ত ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নে ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে মেয়র বলেন, গত বছরের মার্চে প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছিল। আপাতত অর্থ ছাড় পাওয়া যাচ্ছে না। আর প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের জন্যই ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ বন্ধ থাকায় কাজ এগোচ্ছে না।

একটু বৃষ্টি হলেই ওই সব এলাকায় কোমরপানি জমে যায় উল্লেখ করে মেয়র বলেন, সিটি করপোরেশনের নিজেদের টাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের কিছু জায়গায় কাজ হচ্ছে। বিশেষ করে পানিনিষ্কাশনের নালা তৈরি করা হচ্ছে।

গাছ লাগানোর নীতিমালা করেছেন জানিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, কোথায়, কীভাবে, কত ও কী প্রজাতির গাছ রোপণ করা হবে—এসব বিষয়ে একটি নীতিমালা করা হয়েছে। পার্কের নকশা প্রণয়নেও গাছকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গাছ রক্ষায় নকশা পরিবর্তন করতে গিয়ে গুলশান-১ নম্বরের একটি পার্কের (ফজলে রাব্বী পার্ক) সংস্কারকাজ শেষ হতে দেরি হচ্ছে।

এ ছাড়া গুলশান-মহাখালী লিংক রোডে সড়ক বিভাজক নির্মাণের কাজে ৫৯টি গাছ কাটার দরকার পড়লেও নকশা পরিবর্তন করে মাত্র চারটি গাছ কেটে কাজ শেষ করেছেন বলে জানান মেয়র।
নিজেদের জায়গা না থাকায় অনেক উদ্যোগ ও পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, টাকা থাকলেও জায়গার অভাবে গণশৌচাগার বানানো যাচ্ছে না। তবে সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা বিনির্মাণে নগরবাসীকে নিয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

মেয়র বলেন, সুস্থ ঢাকা বিনির্মাণে কল্যাণপুর জলাধার খনন, সেখানে হাইড্রো ইকোপার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা, খাল থেকে দুই লাখ টন বর্জ্য অপসারণ, পার্ক-মাঠের সংস্কার, আধুনিকায়ন, মশকনিধনে মাইকিং ও প্রচারপত্র বিলি এবং তরুণদের মাদক থেকে দূরে রাখতে মেয়রস কাপের আয়োজন করা হয়েছে।

আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, সচল ঢাকা তৈরিতে বাসিন্দাদের উদ্বুদ্ধ করে সরু গলিপথ প্রশস্ত করা হচ্ছে। রাস্তা, নালা ও ফুটপাত নির্মাণের পাশাপাশি ফুটপাতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, জব্দ করা পণ্য নিলামে বিক্রি, খালের সীমানা চিহ্নিত করা ও খুঁটি স্থাপন, পদচারী–সেতু নির্মাণ এবং জলাধার ভরাট প্রতিরোধ করা হয়েছে। আগামী পয়লা সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটি স্কুলে পরীক্ষামূলকভাবে স্কুলবাসও চালু করা হবে।

আর আধুনিক ঢাকার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে পরিত্যক্ত মার্কেট ভবন বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ, রমজান মাসে কাঁচাবাজারে এলইডি স্ক্রিনে পণ্যের মূল্য প্রদর্শন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য আবাসন, ই-বাসের পরিকল্পনা, ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার চালুসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে করপোরেশন কাজ করছে বলে মেয়র জানান।