২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

নারী সহকর্মীকে ‘মোটা’ বলাসহ যৌন হয়রানির অভিযোগ ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

প্রতীকী ছবি

রাষ্ট্রমালিকানাধীন একটি ব্যাংকের একটি বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপকের (ডিজিএম) বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও বডি শেমিং (শারীরিক গঠন নিয়ে বিদ্রূপ) করার অভিযোগ করেছেন এক নারী সহকর্মী।

ঢাকায় রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের একটি শাখায় এমন ঘটনা ঘটেছে। ৪০ বছর বয়সী ওই নারী কর্মকর্তা ৩০ এপ্রিল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। ২ মে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছেও লিখিত অভিযোগ দেন। তাঁর অভিযোগ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা  তাঁকে বডি শেমিং, পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্য, আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি, তুই–তোকারিসহ অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। ১৫ মে ব্যাংক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।  

ওই নারীর অভিযোগ, তিনি স্থূলকায় হওয়ায় প্রায়ই লোকজনের সামনে তাঁকে বডি শেমিং করা হতো। ওই কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করতেন। গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের একদিন তাঁকে কক্ষে ডেকে এনে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করেন। তিনি ছিটকে কক্ষ থেকে বের হয়ে জ্ঞান হারান।

গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে এ ধরনের যৌন হয়রানি ও বডি শেমিংয়ের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই নারী ব্যাংক কর্মকর্তা। এ বছরের ১ এপ্রিল ওই নারী কর্মকর্তাকে ব্যাংকটির এক শাখা থেকে আরেক শাখায় বদলি করা হয়। এরপরে তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী ছানাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভাগীয় তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।’

ব্যাংকের ওই শাখা থেকে পাওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কোনো একটা কাজের বিষয়ে ওই ডিজিএম নারী কর্মকর্তাকে খুঁজছিলেন। ডিজিএমের বয়স ৫০ বছরের বেশি হবে। কক্ষে অন্য ব্যক্তিরাও ছিলেন। ওই সময় নারী কর্মকর্তা কাজটির চাপ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘ও আল্লাহ গো, আমি কতটুকু (কাজ) নিতে পারব!’ ওই ডিজিএম বলেন, ‘এত মোডা (মোটা) একটা মানুষ, সে বলে নিতারবো না (নিতে পারব না)! আমার মান-ইজ্জত রক্ষা করার দায়িত্ব আপনাদের।’ ওই নারী তখন বলেন, ‘আপনি আমাদের মান-ইজ্জত রক্ষা করেন, আমরাও আপনার মান-ইজ্জত রক্ষা করব।’ ওই সময় ডিজিএম বলেন, ‘আপনারা একটা ইট নিলে আমি পাঁচটা ইট নেব।’

আমি কোনো ধরনের কোনো অনৈতিক কিছু করিনি। একটাই ভুল করেছিলাম মোটা বলে। সে ক্ষেত্রেও আমার উদ্দেশ্য খারাপ ছিল না। কাজ করতে উৎসাহ দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। ওই নারী যে গোপনে তা ভিডিও করছিলেন তা বুঝতে পারিনি। সেই ভিডিও তিনি পুরো ব্যাংকে ভাইরাল করে দিয়েছেন।
ডিজিএম

অভিযোগকারী ওই নারী কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, পাবলিক একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ২০০৭ সালে তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। রূপালী ব্যাংকে তিনি যোগ দেন ২০১২ সালে। গত বছরের অক্টোবর মাসে ওই ব্যাংকের একটি শাখায় নতুন ডিজিএম যোগ দেওয়ার পর তিনি বারবার যৌন হয়রানির শিকার হন।

ওই নারীর অভিযোগ, তিনি স্থূলকায় হওয়ায় প্রায়ই লোকজনের সামনে তাঁকে বডি শেমিং করা হতো। ওই কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করতেন। গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের একদিন তাঁকে কক্ষে ডেকে এনে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করেন। তিনি ছিটকে কক্ষ থেকে বের হয়ে জ্ঞান হারান। সহকর্মীদের উপস্থিতিতে ব্যাংকের চিকিৎসক এসে তাঁকে চিকিৎসা দেন। এসব বিষয় নিয়ে তিনি তাঁর আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে মৌখিক অভিযোগ করেও কোনো সমাধান পাননি।

নারী কর্মকর্তার একটি অভিযোগও সত্য নয় বলে দাবি করেন ওই ডিজিএম। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো ধরনের কোনো অনৈতিক কিছু করিনি। একটাই ভুল করেছিলাম মোটা বলে। সে ক্ষেত্রেও আমার উদ্দেশ্য খারাপ ছিল না। কাজ করতে উৎসাহ দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। ওই নারী যে গোপনে তা ভিডিও করছিলেন তা বুঝতে পারিনি। সেই ভিডিও তিনি পুরো ব্যাংকে ভাইরাল করে দিয়েছেন।’

অভিযোগকারী নারী কর্মকর্তা বলেছেন, তিনি নিজে সুপারিশ করে অন্য বিভাগে বদলি হয়ে যান। শুধু তিনি নন, ডিজিএমের কারণে আরও দুই নারী সুপারিশ করে বদলি হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা মুখ খুলতে চান না।

ওই নারী ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বলে মন্তব্য করেন ডিজিএম।  বলেন, ‘উনি (নারী কর্মকর্তা) ডেস্কে থাকতেন না। এ নিয়ে আমি প্রতিক্রিয়া জানানোতে ক্ষুব্ধ হন এবং যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। আমি কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম, ওই নারীর সঙ্গে এক বিভাগে কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। হয় আমাকে বদলি করেন, নাহয় ওই নারীকে বদলি করেন। কর্তৃপক্ষ মেয়েটিকে বদলি করে। বদলি হওয়ার বিষয়টি ওই নারী মেনে নিতে পারেননি।’

তবে অভিযোগকারী নারী কর্মকর্তা বলেছেন, তিনি নিজে সুপারিশ করে অন্য বিভাগে বদলি হয়ে যান। শুধু তিনি নন, ডিজিএমের কারণে আরও দুই নারী সুপারিশ করে বদলি হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা মুখ খুলতে চান না। তিনি আরও বলেন, কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁকে খারাপভাবে উপস্থাপন করার জন্য এবং তাঁর পদোন্নতি ঠেকানোর জন্য ডিজিএম বিভিন্ন জায়গায় তিনি কাজ করেন না বলে বেড়ান।  

ওই নারীর অভিযোগপত্রে রূপালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুসারে কর্মচারী আচরণ বিধিমালার ২২ (ক), ২২ (খ) ও ২৩ ধারায় বিচার চাওয়া হয়। ২২(ক) অনুসারে, শারীরিক ও মৌখিক আচরণ, অশালীন ইঙ্গিতমূলক, কোনো প্রদর্শনী, হুমকি, অনৈতিক চাহিদা এবং প্রতিশোধপ্রবণতা ইত্যাদি কোনো পন্থায় হয়রানিমূলক আচরণ ব্যাংকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ২২(খ) ধারায় বলা হয়েছে, ব্যাংক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নারীর প্রতি হয়রানি ও বৈষম্যমুক্ত কর্মপরিবেশ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।

অবমাননামূলক ও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, শারীরিকভাবে হেনস্তা করা, অশোভন কৌতুক, অনাকাঙ্ক্ষিত দৈহিক সংস্রব, নানাবিধ উপাধি প্রয়োগ, অসম্মানজনক মন্তব্য বা কটাক্ষ করা, অপমানজনক টেলিফোন করা, ই-মেইলে অশোভন বস্তু বা ছবি পাঠানো, চিঠি পাঠানো, কুরুচিপূর্ণ খুদে বার্তা পাঠানো ইত্যাদি যেকোনো ধরনেরই হোক না কেন, তা নারীর প্রতি হয়রানিমূলক আচরণ বলে গণ্য হবে। শাস্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু উল্লেখ না থাকলেও ২৩ ধারায় বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা সূচনাকারীদের প্রতি কঠোরতম পদক্ষেপ নেওয়া হবে।