গাবতলী টার্মিনাল ফাঁকা, অগ্রিম টিকিটের জন্য ভিড় নেই

গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে টিকিটপ্রত্যাশীদের কোনো ভিড় দেখা যায়নি আজ। ২৭ মার্চছবি: খালেদ সরকার

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগাম টিকিট বিক্রি শুরুর পঞ্চম দিন আজ বুধবার গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে টিকিটপ্রত্যাশীদের কোনো ভিড় দেখা যায়নি। মাঝেমধ্যে এক–দুজন করে যাত্রীদের অগ্রিম টিকিটের জন্য টার্মিনালে আসতে দেখা গেছে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ প্রত্যাশিত দিনের টিকিট পেয়ে তা সংগ্রহ করেন। অনেকে আবার টিকিট না কিনেই ফিরে যান।

টিকিট কাউন্টারে থাকা বিভিন্ন পরিবহনের কর্মীরা জানিয়েছেন, এবার টিকিটপ্রত্যাশীদের চাপ আগের বছরগুলোর চেয়ে অনেক কম। বিক্রি শুরুর দিন থেকেও যাত্রীর তেমন চাপ ছিল না। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত শুক্রবার থেকে বাসের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনাল অনেকটাই ফাঁকা। টিকিট বিক্রির কাউন্টারগুলোতে কোনো ভিড় নেই। অলস সময় কাটাচ্ছেন কাউন্টারের ভেতরে টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। কোনো কোনো পরিবহনের প্রতিনিধিদের আবার টার্মিনালে ঢোকার মুখে তৎপর থাকতে দেখা গেছে। কাউকে আসতে দেখলেই কোথায় যাবেন, কবে যাবেন এসব জানতে চাইছিলেন। কেউ কেউ আবার বাস ও গন্তব্যের নাম বলে টিকিটপ্রত্যাশীদের ডাকাডাকি করেন।

গাবতলী বাস টার্মিনালের ভেতরে বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টার ঘুরে দেখা যায়, কেবল চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স, রয়েল এক্সপ্রেস ও পূর্বাশা পরিবহনের মতো কিছু কাউন্টারে টিকিট অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ ও দিনের যাত্রার টিকিটপ্রত্যাশী যাত্রীরা বিভিন্ন গন্তব্যের টিকিট কিনছেন।

চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের কাউন্টার মাস্টার মো. শাহজাহান আলী বলেন, আগামী ৩ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিলের টিকিট অগ্রীম বিক্রি করা হচ্ছে। যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ নেই। স্বাভাবিকের চেয়ে কম যাত্রী। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিনি ২১টি টিকিট বিক্রি করেছেন বলে জানান। ঈদযাত্রায় প্রতিদিন তাঁদের ১১টি বাস ছাড়বে।

এই পরিবহন থেকে টিকিট কেনা দুজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, স্বাভাবিক সময়ে ৬০০-৬৫০ টাকায় নন এসিতে মুজিবনগর পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হয়। এই গন্তব্যে ঈদ যাত্রার ৮ তারিখের টিকিট কিনলাম ১০০ টাকা বেশি, ৭৫০ টাকায়।

এ বিষয়ে শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্য সময়ে বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়ার চাইতেও কম টাকায় আমরা যাত্রী পরিবহন করি। কিন্তু ঈদে যাত্রীদের কাছ থেকে বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হয়। অনেক যাত্রী বিআরটিএর ভাড়া জানেন না বলে অতিরিক্ত ভাড়ার কথা বলে।’

অতীতে আগাম টিকিট পেতে কাউন্টারের সামনে লোকজনের দীর্ঘ সারি দেখা যেত। অনেকে টিকিট কেনার জন্য ভোররাত থেকে সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতেন। এ বছর এমন কিছু দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন পরিবহন কোম্পানির প্রতিনিধিরা।

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টায় ১৩ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, তাঁদের মধ্যে মাত্র তিনজন অগ্রিম টিকিটের জন্য টার্মিনালে এসেছেন। বাকিরা আজকের দিনের যাত্রী।

ঈদযাত্রার আগাম টিকিটের যাত্রী কম থাকার বিষয়ে পরিবহনকর্মীরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালুর পর স্বাভাবিকভাবেই গাবতলীতে যাত্রী অনেক কমে গেছে। এ ছাড়া অনেকেই অনলাইনে টিকিট কিনছেন। তাই টার্মিনালে যাত্রী নেই।

ঈদযাত্রার টিকিট গতকাল মঙ্গলবার বিক্রি শেষ হয়েছে বলে জানান সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আল আমিন। তিনি বলেন, ঈদে এখন গাবতলীতে টিকিট বরাদ্দ কম দেওয়া হয়। প্রতিটি গাড়িতে মাত্র চারটি করে সিট গাবতলীতে বরাদ্দ দেওয়া ছিল। আগামী ৪ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন তাঁদের ১৫টি করে বাস বরিশালের উদ্দেশে যাবে বলেও তিনি জানান।

আল আমিন আরও বলেন, ঈদে এখন বেশি টিকিট দেওয়া হয় সাভার ও নবীনগরের কাউন্টারগুলোতে। কারণ, সেদিকেই যাত্রী বেশি থাকে। অন্য বেশির ভাগ যাত্রী সায়দাবাদ থেকে চলে যায়।