চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত, শুক্র-শনিবার গণসংযোগ
সরকারের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য, ‘ভুক্তভোগী’ পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। এখন তাঁরা নিজ নিজ জেলায় ফিরে যাবেন। কিন্তু সরকারের আশ্বাস বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কর্মসূচি পালন করবেন।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাঁরা আগামী শুক্র-শনিবার মাঠঘাটে (অফলাইন) ও অনলাইনে জনসমর্থন আদায়ে জনসংযোগ চালাবেন। আগামী রোববার জেলায় জেলায় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহিন সরকার আন্দোলনকারীদের পক্ষে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘বিডিআর সদস্যদের অধিকার আদায়ে আন্দোলনরত সবাই আপাতত নিজ নিজ জেলায় ফিরে যাবেন। ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর সদস্যদের পক্ষে জনসমর্থন আদায়ে আগামী শুক্র-শনিবার অনলাইন ও অফলাইনে জনসংযোগ করবেন। তাঁরা সর্বত্র লিফলেট বিতরণ করবেন।’
মাহিন সরকার বলেন, ‘রোববার বিডিআর কমিউনিটির সবাই সব জেলার প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবেন। এরপর পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেওয়া হবে।’
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে হওয়া মামলায় দণ্ডিত বিডিআর সদস্যদের কারামুক্তি, মিথ্যা মামলা বাতিল, মামলার পুনঃতদন্ত, ন্যায়বিচার নিশ্চিত, চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল ও পুনর্বাসনের দাবিতে গতকাল বুধবার থেকে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যসহ ‘ভুক্তভোগী’ পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। গতকাল রাতেও তাঁরা শহীদ মিনারে ছিলেন।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বুধবার সকাল ১০টার দিকে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য, ‘ভুক্তভোগী’ পরিবারের সদস্য এবং তাঁদের স্বজনেরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার জড়ো হন। পরে সেখান থেকে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন। পদযাত্রাটি শাহবাগের দিকে এলে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। পরে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল মাহিন সরকারের নেতৃত্বে স্মারকলিপি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যান। পরে গতকাল সন্ধ্যায় একই দাবিতে আজ শাহবাগ মোড় ‘ব্লকেড’ বা অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিলেন মাহিন সরকার।
ঘোষণা অনুযায়ী আজ বেলা ১টা ৫ মিনিটে শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রা শুরু করে দেড়টার দিকে তাঁরা শাহবাগে পৌঁছান। তাঁদের অনেকে শাহবাগ মোড়ে বসে ও শুয়ে পড়েন। এতে করে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
শাহবাগ মোড়ে দুই ঘণ্টার মতো অবস্থান করে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে দুই ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলনকারীরা শহীদ মিনারে ফিরে যান। দুই ঘণ্টার আলটিমেটামের শেষের দিকে তাঁদের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। এরপর সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিতের এই ঘোষণা দেন মাহিন সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে মাহিন সরকার বলেন, ‘দুই দিন আন্দোলন করেও (একটা সময় পর্যন্ত) আমরা সরকারের কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া (পজিটিভ রেসপন্স) পাইনি। আমরা আজ অল্প সময়ের জন্য শাহবাগ ব্লকেড করেছিলাম। কিন্তু তখন সরকারের তরফ থেকে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। পরে দুই ঘণ্টার আলটিমেটামের শেষ পর্যায়ে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এ বিষয়ে সচিবালয়ে আলোচনা হয়েছে।’
সচিবালয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাহিন সরকার বলেন, ‘আপনাদের দাবিগুলো সরকার ইতিবাচকভাবে (পজিটিভলি) নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকারের যে আচরণ, তাতে এটা স্পষ্ট যে সরকারের ওপর কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ বা চাপ রয়েছে। তাই আমরা আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখব।’
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদর দপ্তর পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। এরপর বাহিনীর নাম বদলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) করা হয়।