অগ্নিনিরাপত্তায় যে যার মতো অভিযানে রাজউক, দক্ষিণ সিটি ও পুলিশ

রাজধানীর ধানমন্ডির সাতমসজিদ সড়কের গাউসিয়া টুইন পিক ভবনটি অফিস হিসেবে ব্যবহারের কথা থাকলেও এতে অবৈধভাবে চলছিল রেস্তোরাঁর ব্যবসা। তাই ভবনের ১৪টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ভেঙে দেওয়া হয় ছাদে থাকা একটি রেস্তোরাঁ। গতকাল দুপুরেছবি: সাজিদ হোসেন

ঘড়ির কাঁটা তখন দুপুর ১২টা ছুঁই ছুঁই। রাজধানীর ধানমন্ডিতে গাউসিয়া টুইন পিক নামের একটি বহুতল ভবনের সামনে রাজউকের একটি গাড়ি চোখে পড়ল। গিয়ে দেখা গেল, সেখানে অভিযান চলছে। বিকেল নাগাদ গাউসিয়া টুইন পিকের ১৪টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভেঙে ফেলা হয় একটি।

ধানমন্ডির গাউসিয়া টুইন পিক থেকে ৮০০ মিটার দূরে (গুগল ম্যাপের হিসাবে) কেয়ারি ক্রিসেন্ট প্লাজায় গতকাল সোমবার একই সময়ে অভিযান চালাচ্ছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তারা ১৫ তলা ভবনটিতে থাকা ১১টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়ে পুরো ভবনটি সিলগালা করে দেয়।

আরও পড়ুন

ওদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গতকাল অভিযান চালিয়েছে পুরান ঢাকার ওয়ারীতে। সেখানে ১৪টি রেস্তোরাঁয় চালানো অভিযানে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে। ডিএমপি জানিয়েছে, রোববার থেকে গতকাল পর্যন্ত পুলিশ ২৮৫টি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছে। এতে ৩৭৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ২০৪টি।

রাজউক, দক্ষিণ সিটি ও পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে যে যার মতো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের জীবন বাঁচাতে, অগ্নিঝুঁকি দূর করতে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভিযান চালাতেই হবে। তবে তা হতে সমন্বিত, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ভিত্তিতে।
গতকাল ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের গাউসিয়ার টুইন পিক ভবনের রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ ওই ভবনে অভিযান চালিয়ে ১২টি রেস্তোরাঁ সিলগালা করে দিয়েছে রাজউক
ছবি: প্রথম আলো

তিন পক্ষের এই অভিযান শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের একটি আটতলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর। ভবনটিতে আটটি রেস্তোরাঁ ছিল। সেখানে খেতে গিয়ে মানুষ আগুনে মারা যান। পরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জানায়, ভবনটিতে রেস্তোরাঁ করার অনুমতি ছিল না। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস জানায়, ভবনটি যে অগ্নিনিরাপত্তার ঝুঁকিতে ছিল, তা তিন দফা চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল। তবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো সমালোচনার মুখে পড়ে। জাতীয় সংসদেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ভবনমালিকদের দায়মুক্তি দেওয়ার অভিযোগ করেন সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং বর্তমানে সরকারি দলের সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিম। এই পটভূমিতে অভিযানে নেমেছে রাজউক, সিটি করপোরেশন ও পুলিশ।

রাজউক, দক্ষিণ সিটি ও পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে যে যার মতো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের জীবন বাঁচাতে, অগ্নিঝুঁকি দূর করতে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভিযান চালাতেই হবে। তবে তা হতে সমন্বিত, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ভিত্তিতে। এতে আরও বেশি সুফল পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন
ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডের কেয়ারি ক্রিসেন্ট টাওয়ারকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্যানার টাঙিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

অভিযান সমন্বিত কি না, জানতে চাইলে গণপূর্তসচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রাজউক আপাতত নিজেদের মতো করে অভিযান পরিচালনা করছে। সরকারের অন্য দপ্তর জনবলের অভাব ও অন্য কাজের চাপে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করতে পারছে না। ফলে সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে এখন অভিযান চালানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, রাজধানীর ধানমন্ডি, সাতমসজিদ রোডসহ অন্যান্য এলাকায় নিয়ম না মেনে যেসব রেস্তোরাঁ পরিচালিত হচ্ছে, রাজউক সেখানে অভিযান চালাবে। পরে সরকারের অন্য দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযান চালানো হবে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তাদের পরিদর্শনে আসা রাজধানীর ২ হাজার ৬০৩টি ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি—১ হাজার ১০৬টি বিপণিবিতান। ৮০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৩৪৫টি হাসপাতাল ও ৩২৫টি আবাসিক ভবন রয়েছে ঝুঁকির তালিকায়।

রাজউকের অভিযান

ধানমন্ডির গাউসিয়া টুইন পার্কে অভিযানে রাজউকের অঞ্চল-৩-এর পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজিনা সারোয়ার এবং সংস্থাটির কর্মকর্তা, কর্মচারী, পুলিশ সদস্য ও একজন র‍্যাব সদস্য ছিলেন।

অভিযানকারীরা জানান, গাউসিয়া টুইন পার্ক ভবনটি ১৫ তলার। সেখানে বিভিন্ন তলায় রেস্তোরাঁ রয়েছে। গতকাল অভিযান শুরুর আগে থেকেই ভবনটির রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ ছিল।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজিনা সারোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ভবনের অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল এফ-১ ক্যাটাগরিতে, অর্থাৎ অফিস হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু দেখা গেল, মাত্র দুটি তলার কিছু অংশে অফিস রয়েছে। বাকিটায় রেস্তোরাঁ, ওষুধ ও পোশাকের দোকান রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভবনটির নকশা অনুযায়ী ছাদ খোলা থাকার কথা। কিন্তু সেখানে ‘রেত্রো লাইফ কিচেন’ নামের একটি রেস্তোরাঁ করা হয়। অভিযানের শুরুতেই সেটি ভেঙে ফেলে রাজউক।

অভিযান চলাকালেই গাউসিয়া টুইন পিকের ডেভেলপার (নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান) কর্তৃপক্ষের আইনজীবীসহ কর্মকর্তারা হাজির হন। প্রতিষ্ঠানটির লজিস্টিক ম্যানেজার রশিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে তাঁরা রেস্তোরাঁ করার অনুমোদন নিয়েছেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তাদের পরিদর্শনে আসা রাজধানীর ২ হাজার ৬০৩টি ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি—১ হাজার ১০৬টি বিপণিবিতান। ৮০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৩৪৫টি হাসপাতাল ও ৩২৫টি আবাসিক ভবন রয়েছে ঝুঁকির তালিকায়।

রশিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা ফ্লোর (তলা) বিক্রি করেছি। তলার মালিকেরা রেস্তোরাঁ ভাড়া দিয়েছেন। ডেভেলপারের দায় নেই। সময় দিলে রাজউকের অনুমোদন যেভাবে আছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। অন্তত ১৫ দিন সময় দিলে রেস্তোরাঁগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অভিযানকালে স্পাইস হার্বস নামের একটি রেস্তোরাঁর মালিকপক্ষকে পেয়ে তাদের দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। রেস্তোরাঁটির মালিক রাইসুল আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেস্টুরেন্ট করা যাবে না, তা জানতাম না। জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নিতে হয়, তা–ও জানা ছিল না। বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে রেস্তোরাঁ করেছি। আমাদের দোষটা কোথায়? এখন আমরা কী করব?’

রাজউকের অভিযান চলে বিকেল পর্যন্ত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজিনা সারোয়ার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ভবনটির ১০টি রেস্তোরাঁ সিলগালা করা হয়েছে। কিছু রেস্তোরাঁর বিদ্যুৎ–সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। যেগুলো সিলগালা করা হয়নি, সেগুলোর কোনো দরজা ছিল না। সব মিলিয়ে ভবনটিতে রেস্তোরাঁ চালানোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণ সিটির অভিযান

সাতমসজিদ রোডের কেয়ারি ক্রিসেন্ট প্লাজায় ১১টি রেস্তোরাঁ রয়েছে। সেখানে দক্ষিণ সিটির অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভবনের দুটি সিঁড়ি; তার একটি বন্ধ, ব্যবহার উপযোগী নয়। সেখানে গ্যাসের সিলিন্ডার রাখা। ছাদও বন্ধ। দুর্ঘটনা ঘটলে কেউ সেখানে যেতে পারবে না।

পরিদর্শন শেষে অগ্নিঝুঁকির কারণে ভবনটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। গতকাল অভিযানের আগে থেকেই এই ভবনের রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ ছিল।

করপোরেশন জনস্বার্থে রেস্তোরাঁগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনার তদারক করছে। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে তারা এই অভিযান পরিচালনা করছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের

অভিযানে ভবনটি সিলগালা করা ছাড়াও সেখানে থাকা ভিসা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড নামক একটি প্রতিষ্ঠানের অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থায় ঘাটতি থাকায় তিনজন কর্মীকে আটক করা হয়। তিন লাখ টাকা জরিমানা আদায়ের পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযানকারীরা বলছেন, মালিকপক্ষের কেউ তখন ছিলেন না।

দক্ষিণ সিটির অভিযানে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও ছিলেন। সংস্থাটির উপসহকারী পরিচালক তানহার ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এখানে ফায়ার সেফটি প্ল্যান (অগ্নিনির্বাপণ পরিকল্পনা) ছিল না। তাই সতর্কতামূলক ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কেয়ারি ক্রিসেন্ট ভবনের দোতলায় হোয়াইট ফেসওয়াশ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মো. জীবন ভবনটির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পবিত্র রমজান মাসের আগে হঠাৎ করে এভাবে দোকান বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরা বিপদে পড়বেন। নতুন করে কোথাও চাকরি পাওয়া যাবে না।

জিগাতলার পর সাতমসজিদ সড়কের রূপায়ণ জেড আর প্লাজায় অভিযান চালায় দক্ষিণ সিটি। সেখানে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার ঘাটতি থাকায় দ্য বুফে এম্পায়ার, বুফে লাউঞ্জ ও বুফে প্যারাডাইস নামের তিনটি রেস্তোরাঁকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের প্রথম আলোকে বলেন, করপোরেশন জনস্বার্থে রেস্তোরাঁগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনার তদারক করছে। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে তারা এই অভিযান পরিচালনা করছে।

ঢাকায় অগ্নিঝুঁকি নিয়ে বেশি আলোচনা তৈরি হয় ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুনে ১২৪ জনের মৃত্যুর পর। এরপর বিভিন্ন সময় সরকারি সংস্থাগুলো অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু সমন্বিত, কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি অভিযান হয়নি।

পুলিশের অভিযান

পুরান ঢাকার ওয়ারীর র‍্যাংকিন স্ট্রিটে অভিযান চালানোর বিষয়ে পুলিশ বলেছে, তারা দেখেছে সেখানে কোনো রেস্তোরাঁর সিঁড়িতে রাখা হয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার, কোনোটিতে রান্নার সামগ্রী। কোনো কোনো রেস্তোরাঁয় নেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা। কোনো কোনোটিতে নেই জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি। বেশির ভাগ রেস্তোরাঁই চলছে আবাসিক ভবনে।

ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার ইকবাল হোসাইন বলেন, বেশির ভাগ রেস্তোরাঁয় অনিয়ম পাওয়া গেছে। তবে কয়েকটি রেস্তোরাঁ পাওয়া গেছে, যেগুলো নিয়ম মেনে বাণিজ্যিক ভবনে গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে সব ধরনের অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা, জরুরি বহির্গমন সিঁড়িসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

ভবনের নিরাপত্তাবিষয়ক তদারক করে সাধারণত রাজউক, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা। পুলিশকে এ ধরনের কাজে সাধারণত দেখা যায় না। পুলিশের অভিযানে কোনো রেস্তোরাঁ বন্ধ করা হচ্ছে না।

পুলিশ এখন কেন রেস্তোরাঁয় অভিযান পরিচালনা করছে, জানতে চাইলে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রেস্তোরাঁর এসব বিষয় দেখার জন্য সরকারি সংস্থা রয়েছে। তবে এসব সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাই সেবা সংস্থার পাশাপাশি পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে। তিনি বলেন, পুলিশের অভিযান চালানো হচ্ছে আইন অনুযায়ী।

ঢাকায় কত রেস্তোরাঁ রয়েছে, তার সঠিক হিসাব জানা যায়নি। তবে রেস্তোরাঁমালিকদের একটি সমিতি রয়েছে। সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের অনিয়ম এখন অন্যের ওপর চাপানো হচ্ছে। ভবনমালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন। কিন্তু ছোট ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দোষ এখানে একজনের নয়। সবার নাকের ডগায় এসব বছরের পর বছর চলে আসছে। তিনি আরও বলেন, রেস্তোরাঁগুলোকে সময় দেওয়া হোক। সারা বছর নজরদারি করার জন্য একটি টাস্কফোর্স করা যেতে পারে, যেখানে মালিক সমিতিও থাকবে।

দরকার সারা বছর নজরদারি

ঢাকায় অগ্নিঝুঁকি নিয়ে বেশি আলোচনা তৈরি হয় ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুনে ১২৪ জনের মৃত্যুর পর। এরপর বিভিন্ন সময় সরকারি সংস্থাগুলো অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু সমন্বিত, কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি অভিযান হয়নি। ফলে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুঝুঁকি কমেনি, বরং বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবারই আলাদা দায়িত্ব আছে। রাজউকের দায়িত্ব সারা বছর ভবনকে নজরদারিতে রাখা। ফায়ার সার্ভিসের কাজ একই। সারা বছরই নজরদারি থাকা দরকার। তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় যেভাবে সমন্বিত পরিকল্পনা করে কাজ করা হয়েছিল, সেটাই দরকার।