‘পরিবহনমালিকদের সঙ্গে কোনো সরকারই পারে না। দানবের বিরুদ্ধে মামলা করে তো কোনো লাভ হবে না। আমরা চাই না বোনের লাশ কাটাছেঁড়া হোক। তাই বোনের পোস্টমর্টেমও চাই না’—কথাগুলো রাজধানীতে বাসের চাপায় নিহত আইনজীবী পারভীন সুলতানার ভাই ফরিদ উদ্দিনের।
আজ রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়কে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় নিহত হন মোটরসাইকেল আরোহী পারভীন সুলতানা (৬০)। মোটরসাইকেলটির চালক পারভীনের ভাতিজা শাখাওয়াত হোসেন এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।
আইনজীবী পারভীন সুলতানার সহকারীর কাজ করতেন শাখাওয়াত। পারভীন আইনজীবী ছিলেন অথচ সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুতে পরিবার কেন মামলা করতে চাইছে না, জানতে চাইলে শাখাওয়াত বলেন, ‘পরিবহন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকাই তো কঠিন।’
পারভীনের বাবার সম্পত্তি নিয়ে মামলা চলছে নারায়ণগঞ্জের একটি আদালতে। সে মামলার কাজে সকালে শাখাওয়াতকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু যাওয়ার পর শোনেন, বিচারক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। ফেরার পথে লাভলী পরিবহনের একটি বাস তাঁদের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গের সামনে শাখাওয়াত প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফুফু আমার মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ছিলেন। ধাক্কাটা তাঁর গায়েই বেশি লাগে। এতে তিনি ছিটকে নিচে পড়ে যান। ছিটকে পড়ার পরও ফুফুর জ্ঞান ছিল। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য দুজন পুলিশ কনস্টেবল একটি গাড়ি ভাড়া করে দেন। তবে আগেই বুঝতে পেরেছিলাম, তিনি বেঁচে নেই। হাসপাতালে আনার পরই চিকিৎসকেরা জানান, ফুফু জীবিত নেই।’
পারভীন সুলতানার ছোট ভাই ফরিদ উদ্দিন জানালেন, তাঁর বোন বিয়ে করেননি। রাজধানীর সূত্রাপুরের শ্যামবাজারে মোহন দাস লেনের কাগজিটোলা এলাকায় বাবার বাড়িতে তাঁরা একসঙ্গেই থাকতেন। তিনি বলেন, ‘এই বোনটাই আমার সব থেকে কাছের ছিল। আমার সব কাজে সাহায্য করত। বোনটা এভাবে মরে গেল। আমরা চাই না বোনের শরীরটা কাটাছেঁড়া হোক।’
পারভীন সুলতানা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ছিলেন। তবে ঢাকার বিচারিক আদালতেও আইন পেশার চর্চা করতেন তিনি। সেখানে তাঁর চেম্বারও আছে। ফরিদ উদ্দিন জানান, তাঁরা পাঁচ ভাই ও দুই বোন। তিন ভাই আর এক বোন আগেই মারা গেছেন। আজ পারভীন সুলতানাও মারা গেলেন।
যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, দুর্ঘটনায় জড়িত বাসের চালককে আটক করা হয়েছে। বাসটি জব্দ করেছে পুলিশ।