হুইলচেয়ারে এসে প্রক্টরের কাছে অভিযোগ, বিচার না করলে আত্মহত্যার হুমকি

ছাত্রলীগের হামলার শিকার ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীরা আজ বুধবার বিকেলে ক্যাম্পাসে এসে প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে বিচার দাবি করেছেন
ছবি: প্রথম আলো

হুইলচেয়ারে করে ক্যাম্পাসে এসে ছাত্রলীগের হামলার বিচার চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে আবেদন করলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। হামলাকারীদের শাস্তি না দিলে প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন তিনি।

ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করতে গিয়ে গত শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের হামলার শিকার হন বিন ইয়ামিনসহ সংগঠনটির নেতা–কর্মীরা। পাঁচ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আজ বুধবার বিকেলে প্রক্টর কার্যালয়ে যান তাঁরা। এ সময় বিন ইয়ামিন নিজে ছিলেন হুইলচেয়ারে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আসিফ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক আহনাফ সাঈদ খান প্রমুখ তাঁর সঙ্গে ছিলেন৷ বিন ইয়ামিনের স্বাক্ষর করা লিখিত অভিযোগ প্রক্টরের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

প্রক্টরের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে ১৭ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১০টার দিকে সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীসহ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির ফটকে উপস্থিত হন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের টিএসসিতে প্রবেশে বাধা দেন। তাঁরা অনেক অনুরোধ করার পরেও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের উদ্দেশে অকথ্য গালিগালাজ শুরু করেন। পরে তাঁরা ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালান। এ সময় গার্ডার ফেলে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্র অধিকার পরিষদের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ইউনুস সানির পা ভেঙে দেওয়া হয়।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ‘ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেদিন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমিসহ আমার সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির ফয়সাল, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি ফয়সাল রকিসহ ২৫ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে রাস্তায় ফেলে গুরুতর জখম করেন এবং মিলন চত্বরে পুলিশের হাত থেকে লাঠি কেড়ে নিয়ে নারকীয় হামলা চালান৷ এই নারকীয় হামলায় প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী শাহনেওয়াজ বাবু, ইসমাইল আবদুল মুনাফ ওরফে প্রান্ত ও শাকিরুল ইসলাম ওরফে সাকিব, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার শহীদ ওরফে শুভ ও এম আর জিহাদ, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদ জামান, কবি জসীমউদ্‌দীন হল শাখার সহসভাপতি রাশেদুজ্জামান রনি, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আলম চৌধুরী এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ইবনে আবদুল হক ওরফে রাব্বি।’

উল্লিখিত হামলাকারীসহ ছাত্রলীগের ৮০-১০০ জন নেতা-কর্মী এই হামলায় অংশ নেন উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, ছাত্রলীগের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নষ্টসহ শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। ছাত্র অধিকার পরিষদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার নেতৃত্বদানকারী ও হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্রলীগের সব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে দাবি জানানো হয়েছে প্রক্টরের কাছে।

প্রক্টরের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ দেওয়ার পর বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে এ হামলার বিচার চেয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এ বিচার যদি তিনি না করেন, আমি সংগঠনের সর্বোচ্চ প্রতিনিধি হিসেবে এই প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে এসে নিজের গায়ে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যা করব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করবেন তিনি। প্রক্টর আরও বলেন, ‘একই সঙ্গে তাঁদের (ছাত্র অধিকার) উসকানিমূলক রাজনীতি পরিহার করে শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতিতে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা সবার সহযোগিতা চাই।’