ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বেদম মারধরের শিকার ছাত্রদলের দুই নেতা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গতকাল মঙ্গলবার রাতে মারধরের শিকার ছাত্রদলের দুই নেতা
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে বেদম মারধরের শিকার হয়েছেন ছাত্রদলের দুই নেতা। পরে তাঁদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

মারধরের শিকার দুজন হলেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইমাম আল নাসের ও অমর একুশে হল শাখার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জসিম খান। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটিতেও তাঁদের পদ আছে।

ছাত্রদলের অভিযোগ, হত্যার উদ্দেশ্যে ইমাম ও জসিমের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগের ভাষ্য, ছাত্রদলের এই দুই নেতা গতকাল মধ্যরাতে নাশকতার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাঁদের আটক করেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে তাঁদের পুলিশে সোপর্দ করেন।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, হত্যার উদ্দেশ্যে ইমাম ও জসিমের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। দুই নেতার ওপর অমানবিক শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় দুজনকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইমাম ও জসিমের মুঠোফোন নিয়ে গেছে ছাত্রলীগ। এই মুঠোফোন থেকে ইমাম ও জসিমের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ছাত্রলীগ ব্যবহার করছে। দুই নেতার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দিচ্ছে ছাত্রলীগ।

ঘটনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল ও প্রক্টর মাকসুদুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করেছে ছাত্রদল। একই সঙ্গে তারা ছাত্রলীগের ‘সন্ত্রাসীদের’ বিচার ও ছিনতাই করা মুঠোফোন ফেরত পাওয়ার দাবি জানিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের দুই নেতা ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁদের অমানবিক নির্যাতন করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রদলের দুই নেতাকে সহযোগিতা করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উল্টো তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব সময়ই এ ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ করে। এর তীব্র নিন্দা জানায় ছাত্রদল।’

ছাত্রদলের দুই নেতাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আটক করে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে পুলিশে সোপর্দ করেছে বলে দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদলের দুই নেতা নাশকতার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। তাঁদের কাছে এ-সংক্রান্ত কিছু আলামত পাওয়া গেছে। তাঁরা গতকাল কাঁটাবন এলাকার সড়কে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোর কথা স্বীকার করেছেন। তাঁরা এ কথাও স্বীকার করেছেন যে তাঁদের আশপাশে থাকা একজন রাতে ক্যাম্পাসে ককটেল ফোটাবেন। দুজনের কাছে তালা ও ব্যানার পাওয়া গেছে। তাঁদের একজনের সঙ্গে থাকা মুঠোফোনের তথ্য মুছে গেছে। আরেকজনের মুঠোফোনে নাশকতাসংক্রান্ত কিছু গোপন তথ্য পাওয়া গেছে।

ছাত্রদলের দুই নেতাকে মারধরের অভিযোগের বিষয়ে তানভীর হাসান বলেন, বাংলাদেশের জনগণসহ শিক্ষার্থীরা সচেতন হয়ে গেছেন। এখন সাধারণ লোকজন নাশকতাকারী ব্যক্তিদের গণপিটুনি দিচ্ছেন। কোনো ধরনের নাশকতা সহ্য করা হবে না। কেউ নাশকতা করতে এলে, যে হাত দিয়ে আগুন দেবে, প্রয়োজনে সেই হাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাকসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুজন (ছাত্রদল নেতা) বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী নন। গত রাতে তাঁদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদলের দুই নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।