বড় মানুষদের সান্নিধ্য পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় তাঁদের বই পড়া: আনিসুল হক
তুমি যদি রবীন্দ্রনাথের বই পড়ো, তাহলে রবীন্দ্রনাথ তোমার সঙ্গে রয়েছেন। তুমি হুমায়ূন আহমেদের বই পড়লে, হুমায়ূন আহমেদ তোমার সঙ্গে রয়েছেন। এর চেয়ে সহজে বড় মানুষদের সান্নিধ্য পাওয়ার আর কোনো উপায় নেই।
আজ রোববার রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথমা বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক।
মাইলস্টোন কলেজ ডিবেটিং ক্লাবের একুশতম বিতর্ক কর্মশালা উপলক্ষে এই মেলার আয়োজন করা হয়। মাইলস্টোন কলেজে প্রথমা প্রকাশনের পঞ্চমবারের মতো আয়োজিত এই বইমেলা চলবে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত।
শিক্ষার্থীদের বই পড়ার আহ্বান জানিয়ে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষরা তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় বইয়ে লিখে রেখে গেছেন।
আনিসুল হক আরও বলেন, ‘পৃথিবী ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয়। এখানে অপরাধ না থাকলেও মানুষ মারা যায়। যেমন আমি রংপুরের লোক, বাসে বা ট্রেনে আসতে যদি অ্যাকসিডেন্ট (দুর্ঘটনা) ঘটে, এর জন্য কিন্তু আমি দায়ী না। গাজায় যে শিশুরা মারা যাচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে; সেই শিশুদের আসলে কোনো অপরাধ নেই। তেমনি মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় যে শিশুরা মারা গেছে, তাদেরও কোনো অপরাধ ছিল না। তবুও তারা প্রাণ হারিয়েছে।’
দুঃখ ভাগাভাগি করলে কমে উল্লেখ করে এই কথাসাহিত্যিক বলেন, সেই দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতেই প্রথমার উদ্যোগে এই বইমেলার আয়োজন।
এ সময় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত ৬০ শিক্ষার্থীর জন্য ৬০ হাজার টাকার বই উপহারের ঘোষণা দেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করতে তাৎক্ষণিক প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে বিজয়ী পাঁচজনকে তাঁর লেখা পাঁচটি বই উপহার দেন।
মাইলস্টোন পরিবার এখনো বুকে কষ্ট নিয়ে চলছে উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম বলেন, ‘এই দুর্ঘটনায় আমরা আমাদের শিশু শিক্ষার্থীদের হারিয়েছি, যা আমাদের অন্তরে গভীর দাগ কেটে গেছে। পুরো মাইলস্টোনে এখনো একটি গুমোট পরিবেশ বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই।’
প্রথমার বইমেলা মাইলস্টোন পরিবারের এই গুমট পরিবেশ কিছুটা হালকা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে আসতে চাই। আমার বিশ্বাস, এই বইমেলা একঝলকের জন্য হলেও আমাদের স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সুযোগ করে দেবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
মাইলস্টোন শিক্ষক ফাতেমাতুজ্জোহরার সঞ্চালনায় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলেজের উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
‘নিজেকে অনেক হালকা লাগছে’
বইমেলা উপলক্ষে মেলা প্রাঙ্গণের পাশেই মাইলস্টোন শিক্ষার্থীরা এঁকেছেন দেয়ালিকা। এতে স্থান পেয়েছে বিজ্ঞাননির্ভর বিভিন্ন তথ্যচিত্র। সাম্প্রতিক সময়ে মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্মৃতির পাশাপাশি দেয়ালিকায় স্থান পেয়েছে দুর্ঘটনা–পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতার নানা চিত্রও।
মেলায় অংশ নিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন মাইলস্টোন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবতাহি শাইয়ান। দুর্ঘটনার দিন এই শিক্ষার্থীর ছোট বোন অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিল বলে জানায় সে।
শাইয়ান বলে, পাঁচ মিনিট দেরি হলে সে–ও বেঁচে ফিরত না। এত দিন মনটা ভীষণ খারাপ ছিল। কিন্তু আজকের এই বইমেলায় এসে মনে হচ্ছে একটা বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছি। একটি বইও কিনেছি। নিজেকে অনেক হালকা লাগছে।
আয়োজকেরা জানান, এবারের মেলায় প্রথমার বইয়ে ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাবে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি বাংলাদেশি অন্য প্রকাশনার বইয়ে ২০ শতাংশ এবং বিদেশি প্রকাশনার বইয়ে ৫ শতাংশ ছাড় রয়েছে।
মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথমার বইয়ের ওপর রিভিউ প্রতিযোগিতার আয়োজন রয়েছে। ৩০ আগস্ট এই রিভিউয়ের ওপর তিনজন শিক্ষার্থীকে বই উপহার দেওয়া হবে।