হাই–টেক পার্কের দপ্তরে হঠাৎ গিয়ে যা দেখল কর্তৃপক্ষ

সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য অফিসসূচি বদলিয়েছে। নতুন সময়ের অফিস সকাল আটটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত। নতুন এই সময় কর্মকর্তা–কর্মচারীরা কতটা মেনে চলছেন, তা দেখতে গত মাসে বাংলাদেশ হাই–টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের চারটি প্রকল্পের দপ্তরে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটি) কর্তৃপক্ষ হঠাৎ পরিদর্শন করেছে।
একটি প্রকল্পের দপ্তরে সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। হাজিরা খাতা এক কর্মকর্তার কেবিনেটে তালাবদ্ধ ছিল। আরেকটি প্রকল্পের দপ্তরে সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে পাওয়া গেছে পাঁচজন কর্মচারীকে। অন্য দুটি প্রকল্পে নির্ধারিত সময়ে গিয়ে একটিতে সাতজন ও আরেকটির দপ্তরই বন্ধ পাওয়া যায়।

গত ২৪ আগস্ট থেকে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান নতুন সময় সকাল আটটা থেকে শুরু হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল আটটার পর আইসিটি বিভাগের পরিকল্পনা, উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার আজিজুল ইসলাম দুজন কর্মকর্তাকে নিয়ে বাংলাদেশ হাই–টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের চারটি প্রকল্প কার্যালয় পরিদর্শন করেন।

প্রকল্পের চার দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সময়মতো উপস্থিত না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। তবে একটি ছাড়া বাকি তিনটি প্রকল্পের দপ্তরে কতজন কর্মী রয়েছেন, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

প্রতিবেদন ও ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হাই–টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা সময় মতো সেদিন উপস্থিত ছিলেন না, তাঁদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া ও সতর্ক করা হয়েছে।

চার দপ্তরের সকালের পরিস্থিতি

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনে রয়েছে হাই–টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের বঙ্গবন্ধু হাই–টেক সিটি-২–এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (১১টি), বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল পরিষেবা ও কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ (বিডিসেট) কেন্দ্র এবং শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (১৪টি) প্রকল্পের দপ্তর।

আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার আজিজুল ইসলাম এই দপ্তরগুলোয় সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে পরিদর্শনে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইসিটি বিভাগের উন্নয়ন, বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন অধিশাখার উপসচিব মো. মনির হোসেন ও পরিকল্পনা শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব রোজিনা আক্তার।

বঙ্গবন্ধু হাই–টেক সিটি-২ প্রকল্পের দপ্তরে সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে তিন কর্মকর্তা প্রথমে পরিদর্শনে যান। সে সময় একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছাড়া কাউকে পাননি। এর ১০ মিনিট পর কম্পিউটার অপারেটর ও অফিস সহায়ক উপস্থিত হন। হাজিরা খাতা এক কর্মকর্তার কেবিনেটে তালাবদ্ধ থাকায় তা পর্যবেক্ষণ করতে পারেনি পরিদর্শক দল। এই দল পর্যটন ভবনে অবস্থানকালীন প্রকল্প পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান বা প্রকল্পের অন্য কোনো কর্মকর্তা দপ্তরে উপস্থিত হননি। তবে এখানে মোট কতজন কর্মী রয়েছেন, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (১৪টি) প্রকল্পের দপ্তরে ৮টা ৪০ মিনিটে গিয়ে পরিদর্শনকারী দল দপ্তরে ৫ কর্মচারীকে দেখতে পান। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম হাই–টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা বিভাগে উপপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সে সময় হাই–টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে ছিলেন বলে জানতে পারে পরিদর্শক দল। প্রকল্প পরিচালক ও অন্য কোনো কর্মকর্তা দপ্তরে উপস্থিত না থাকায় প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তারা জানতে পারেনি।

শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (১১টি) প্রকল্পের দপ্তর সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে পরিদর্শন করেন আইসিটি বিভাগের তিন কর্মকর্তা। এই প্রকল্পের ২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে সাতজনকে উপস্থিত দেখতে পান তাঁরা। দপ্তরে উপস্থিত কেউ হাজিরা খাতা দেখাতে পারেননি। প্রকল্প পরিচালক এ কে এম আবদুল্লাহ খান বা অন্য কোনো কর্মকর্তা দপ্তরে উপস্থিত না থাকায় প্রকল্পের কাজ সম্পর্কে জানা যায়নি।

সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল পরিষেবা ও কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ (বিডিসেট) কেন্দ্র প্রকল্পের দপ্তর বন্ধ পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে পরিদর্শনকারী দল। এরপর সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে গিয়ে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে পাওয়া যায়। এই দপ্তরে পাঁচজন কর্মচারী আছেন, যাঁদের মধ্যে পরিদর্শনের সময় চারজন অনুপস্থিত ছিলেন। প্রকল্প পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম রাজশাহীতে পরিদর্শনে ছিলেন বলে তাঁরা জানতে পারেন। এই প্রকল্পের কর্মকর্তাদের না পাওয়ায় অগ্রগতি বা কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারে পরিদর্শনকারী দল।

প্রতিবেদন কী বলছে

পরিদর্শন নিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর হাই–টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয় তারা।

পরিদর্শনকারী দল প্রতিবেদনের সুপারিশে লিখেছে, তাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, প্রকল্প অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সময়মতো অফিসে উপস্থিত হন না।

অনুপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংস্থার প্রধান ও প্রকল্প পরিচালকদের প্রতি সুপারিশ করা হয়।