বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট: সিন্ডিকেটের অভিযোগ তদন্ত করবে মানবাধিকার কমিশন

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ। আজ সোমবার বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি
ছবি: মানসুরা হোসাইন

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট আজ সোমবার পরিদর্শন করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখানে ভর্তি হতে আসা মুমূর্ষু শিশুদের একটি সিন্ডিকেট বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছে বলে কমিশন অভিযোগ পেয়েছে। সিন্ডিকেটের বিষয়টি কমিশনের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও চিঠি দেওয়া হবে।

আজ দুপুরের দিকে কামাল উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট পরিদর্শনে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মানবাধিকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

কামাল উদ্দিন আহমেদ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড, বিশেষ করে ডেঙ্গু ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন। তিনি রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। পরিদর্শন শেষে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, এখানে সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে বলে কমিশন অভিযোগ পেয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, এই সিন্ডিকেটে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা, এমনকি আনসার সদস্যরাও জড়িত। হাসপাতালে শয্যা নেই বলে প্রচার চালায় সিন্ডিকেট। এভাবে তারা এখানে ভর্তি হতে আসা মুমূর্ষু শিশুদের বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। একে ‘মুমূর্ষু রোগীদের কেনাবেচা’ বলে অভিহিত করেন তিনি।

কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রীয় অর্থে এসব প্রতিষ্ঠান বানানো হচ্ছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানে মুমূর্ষু শিশু রোগী ভর্তি করতে এসে অভিভাবকদের সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে। শেষে মৃত সন্তান নিয়ে অভিভাবকদের বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। রোগীদের এভাবে যারা কেনাবেচা করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।

ডেঙ্গু রোগীদের বিপুল চিকিৎসা খরচসহ স্বাস্থ্য খাতের নানা অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে ডেঙ্গু চিকিৎসায় লাখ লাখ টাকা খরচ হওয়া, স্যালাইন–সংকট, স্যালাইনের দাম বেশি নেওয়াসহ বিভিন্ন খবর আসছে। অভিযোগগুলো তদন্তের বিষয়। তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে, তা অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে এখানে যে রোগীরা ভর্তি আছেন, তাঁদের স্বজনেরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তবে যাঁরা ভর্তি হতে পারছেন না, বিশেষ করে যারা মুমূর্ষু শিশু, তাদের জন্য কোনোভাবে হাসপাতালে শয্যা বাড়িয়ে ভর্তি করার পরামর্শ দেন তিনি।

পরে হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটটির পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। বেসরকারি হাসপাতালে সিন্ডিকেটের রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, এখানে শয্যা খালি না থাকলে রোগী ভর্তি করা হয় না। কিংবা এক শয্যায় দুই রোগীকেও ভর্তি করা হয় না। তবে মুমূর্ষু কোনো রোগী এলে তাঁকে এখানকার জরুরি বিভাগে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে রোগীকে অন্য সরকারি হাসপাতালে পাঠানোর জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। হাসপাতালের ভেতরে কোনো সিন্ডিকেট সক্রিয় নেই। তবে হাসপাতালের গেটের বাইরে রোগীর স্বজনেরা সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ছেন। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে সবাই যাতে তৎপর হয়, সেটাই তাঁরা চান।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৪ আগস্ট বেসরকারি চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর-এর ‘সার্চলাইট’ নামের অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠানে ‘মুমূর্ষু রোগী কেনাবেচা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। প্রতিবেদনটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে।