রাজধানীর উত্তরার একটা অংশে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের উড়ালসড়কের গার্ডার স্থাপনের কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় লোকজন, পথচারী, যাত্রীরা বলছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে আবার কাজ শুরু হলে গতকাল সোমবারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
গতকাল বিকেল সোয়া চারটার দিকে উত্তরা পশ্চিম থানার সেক্টর-৩-এর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে প্রকল্পের উড়ালসড়কের গার্ডারের চাপায় একটি প্রাইভেট কারের পাঁচ আরোহী নিহত হন। আহত হন দুজন। নিহত ও আহত আরোহীরা সবাই পরস্পরের স্বজন।
এ দুর্ঘটনার জেরে বিমানবন্দর থেকে রাজলক্ষ্মী পর্যন্ত প্রকল্পের উড়ালসড়কের গার্ডার স্থাপনের কাজ বন্ধ রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দুর্ঘটনাস্থলের পাশে ক্রেন ও গার্ডার পড়ে আছে। সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার ভিড় রয়েছে।
এলাকাবাসীসহ পথচারীরা প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে দুর্ঘটনাস্থলে ভিড় করছেন। তাঁরা সবাই বলছেন, নির্মাণকারীদের অবহেলায় এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ব্যস্ত সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রেখে গার্ডার ওঠানোর কাজ দিনের পর দিন চলেছে। কোনো ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি গতকালের দুর্ঘটনার পরও নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
দুর্ঘটনাস্থলের কাছের একটি বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী আবদুল খালেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই দেখছি, সড়কে গাড়ি চলার মধ্যেই ক্রেন দিয়ে গার্ডারসহ ভারী জিনিস ওপরে তোলা হচ্ছে। আজ না হয় কাল এমন একটা অ্যাকসিডেন্ট হতোই।’
সড়কের ওপর নির্মাণকাজ চলার সময় যানবাহন ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রকল্পের কাজের অংশ। এ জন্য নির্মাণ এলাকা ঘিরে রাখার নিয়ম। কিন্তু প্রায় এক দশক ধরে চলা বিআরটি প্রকল্পে তার কিছুই মানা হয়নি।
প্রকল্পের কাজ চলছে, এমন এলাকা আজ ঘুরে দেখা যায়, সড়কের মাঝখানে গার্ডার রাখা হয়েছে। প্রকল্প ঘিরে কোনো রকম নিরাপত্তাবেষ্টনী নেই। বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণসামগ্রী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। কংক্রিটের স্ল্যাব থেকে লোহার রড বেড়িয়ে রয়েছে। বালু স্তূপ করে সড়কে রাখা হয়েছে এবং ঢেকে না রাখায় তা বাতাসে উড়ছে।
আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দর থেকে উত্তরা পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে অন্যান্য দিনের মতোই গাড়ির চাপ রয়েছে। স্থানীয় লোকজন, পথচারী, যাত্রীদের অনেকই গতকালের দুর্ঘটনা নিয়ে আলোচনা করছেন। তাঁদের মতে, যে কেউ এ দুর্ঘটনার শিকার হতে পারতেন। নির্মাণকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চরম অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে আবার প্রকল্পের কাজ শুরু হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে বাসের আলাদা লেন নির্মাণ করা হচ্ছে। এটাই বিআরটি প্রকল্প। প্রকল্পের মূল বাস্তবায়নকারী সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
বিআরটি প্রকল্পে আগেও একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত ১৫ জুলাই গাজীপুর শহরে গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে একজন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হন। গত বছর ১৪ মার্চ বিমানবন্দর এলাকায় ও আবদুল্লাহপুরে একই দিনে দুবার গার্ডারধসের ঘটনা ঘটে। এতে নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত ছয়জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে তিনজন চীনের নাগরিক ছিলেন।