ডিএনসিসির একদল কর্মচারীর হাতে সহকারী সচিব লাঞ্ছিতের অভিযোগ
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সংস্থাপন-১ ও ২ শাখার সহকারী সচিব জাহিদ হাসানকে গতকাল বুধবার অফিস কক্ষে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ এর লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শেখ শওকত হোসেন ও পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক (সিআই) ফরহাদ হোসেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফরহাদ।
উল্লেখ্য, শওকত হোসেন ঢাকা উত্তর সিটির জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি এবং ফরহাদ হোসেন সাধারণ সম্পাদক।
এ ঘটনার প্রতিকার ও দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলমের কাছে একটি লিখিত আবেদন করেছেন জাহিদ হাসানসহ ডিএনসিসির অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা। আবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার বেলা তিনটার দিকে শেখ শওকত হোসেন ও ফরহাদ হোসেনের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন কর্মচারীর একটি দল সহকারী সচিবের (জাহিদ) কক্ষে গিয়ে শার্টের কলার ধরে টানাটানি করে এবং মারতে করতে উদ্যত হয়। এ সময় তাঁর কক্ষে আগে থেকে থাকা সিটি করপোরেশনের নিরাপত্তা কর্মকর্তা, সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা ও সহকারী ব্যবস্থাপক (পরিবহন)–কে কর্মচারীরা বের করে দেন। এরপর জাহিদ হাসানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, কর্মচারীদের এ চক্রটি ঢাকা উত্তর সিটির বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকেও অনৈতিক সুবিধা নিতে বিভিন্নভাবে চাপ ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। ফলে করপোরেশনে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশের বিঘ্ন ঘটছে এবং কর্মকর্তারা হামলা-মামলার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। আবেদনে এসব দুষ্কৃতকারী কর্মচারীকে শনাক্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
উত্তর সিটি করপোরেশনের সহকারী সচিব জাহিদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, কর্মচারীরা হঠাৎ তাঁর কক্ষে ঢুকে হুমকি-ধমকি ও গালিগালাজ দিতে শুরু করেন। এ সময় শওকত তাঁর শার্টের কলার ধরে টানাটানি করেন। একপর্যায়ে শওকত ও ফরহাদ দুজনে মিলে মারতে উদ্যত হন। তিনি এ ঘটনার বিচার চান বলেও জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কর্মকর্তাদের আবেদন দেওয়ার কথা তিনি শুনেছেন। তবে দাপ্তরিক কাজে বাইরে থাকায় তিনি ওই আবেদন এখনো হাতে পাননি। পেলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বেশ কয়েকবার শেখ শওকত হোসেনকে ফোন করলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোর কাছে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, সাময়িক বরখাস্ত হয়ে থাকা সিটি করপোরেশন শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুর রশিদকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হচ্ছে, এমনটা জানতে পেরে তাঁরা কথা বলতে গিয়েছিলেন। এ সময় কয়েকজন নেতা-কর্মী কিছুটা ক্ষুব্ধ হন। তখন তিনি ওই নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করেন।
ঢাকা উত্তর সিটি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ আগস্ট ঢাকা উত্তর সিটির তথ্য কর্মকর্তা পিয়াল হাছানকেও ঢাকা উত্তর সিটির নগর ভবন থেকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছিল। ওই দিনও এই কর্মকর্তাকে মারধর করেছিলেন শওকত হোসেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের প্রস্তাবিত কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক গাদ্দাফি হোসেন। এ ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সবাই জানলেও তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।