মেলায় ছুটির দিনের আনন্দ
ছুটির আমন্ত্রণে বইমেলা ডেকে ছিল গতকাল নগরবাসীদের। এবার মেলার দ্বিতীয় দিনেই পড়ল সাপ্তাহিক ছুটি। বেলা ১১টা থেকেই খুলেছিল ফটক। প্রথম পর্বে বেলা একটা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর।
সকাল থেকে মেলা খুললেও শিশুপ্রহরে উপস্থিতি ছিল নগণ্য। লোকসমাগম বাড়তে থাকে দুপুরের পর। তবে গতকাল মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকায় আগের মতোই বাসে, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা রিকশায় করে গ্রন্থানুরাগীরা এসেছিলেন মেলায়। সন্ধ্যার আগে আগেই মেলার মাঠ সরগরম। স্টলে স্টলে ঘুরে বই বাছাই ও বই নিয়ে আড্ডায় ফিরে আসে ছুটির দিনের বইমেলার চিরচেনা দৃশ্যপট।
নির্মাণ ও জঞ্জাল
মেলার অবকাঠামো তৈরির কাজ অনেক বাকি এখনো। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে দেখা গেল, বেশ কিছু প্রকাশকের স্টলের নির্মাণকাজ চলছে। একাডেমির নতুন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চের শুধু ছাউনি তোলা হয়েছে, মঞ্চের কাজ পুরোটাই বাকি। খাবারের দোকানগুলোর স্থান পূর্ব দিকে। সবে সেখানে বাঁশের খুঁটি বসানো হচ্ছে। নামাজের জায়গায় প্রথম দিনে আলো ও মাদুর—কিছুই ছিল না। গতকাল আলোর ব্যবস্থা হলেও মাদুর বিছানোর কাজ শেষ হয়নি। এমন অনেক কিছুই অসমাপ্ত রয়েছে।
সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিকটু হয়ে আছে মাঠজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিস্তর জঞ্জাল। আগের দিন বৃষ্টি হওয়ায় গতকাল ধুলার সমস্যা থেকে পাঠকেরা রেহাই পেয়েছেন বটে, তবে জঞ্জাল এড়িয়ে অসমতল মাঠে চলতে বেশ অসুবিধায়ই পড়তে হয়েছে। তা ছাড়া মেলার মাঠে আগে যেমন বেঞ্চ তৈরি করা হতো, বসার জন্য এবার তা–ও নেই। ফলে বয়স্ক মানুষদের বেশ অসুবিধাই হয়েছে। এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করলেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। স্ত্রী অধ্যাপক ড. শওকত আরা হোসেনের সঙ্গে তিনি সন্ধ্যায় এসেছিলেন মেলায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মতো বয়স্ক লোকদের জন্য বসার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন ছিল। প্রাণে সঞ্জীবনী শক্তি জাগানোর মতো বইয়েরও অভাব লক্ষণীয়। হাটের মতো বারোয়ারি অবস্থা ফিরে আসছে। এই দিকগুলো নিয়ে আয়োজকদের ভাবতে হবে।’
প্রথমায় তিন প্রজন্ম
বিকেলে প্রথমা প্রকাশনের স্টলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রবীণ আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ বই কিনতে এসেছিলেন তিন প্রজন্মসহ। সঙ্গে ছিলেন ছেলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক সুফিয়ান ও নাতি ঈশান ইমতিয়াজ। স্ত্রী আরিফা বেগম আর পুত্রবধূ ঈশিতা মহলও বাদ পড়েননি। আবদুস সামাদ বলেন, ‘সপরিবার মেলায় এসেছি প্রাণের টানে।’ কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন প্রথমা থেকে প্রকাশিত কখনো আমার মাকে নামে তাঁর নতুন উপন্যাসে। সেটি কিনেছেন তাঁরা। বাছাই করছিলেন আরও কিছু বই।
আনিসুল হক বলেন, ‘গণমাধ্যমের কাজ হবে ভালো বইগুলোর পরিচিতি পাঠকের কাছে তুলে ধরা।’
গতকাল প্রথমায় ফারুক মঈনউদ্দীনের গোয়েন্দা হেমিংওয়ে ও তাঁর প্রেমিকাদের খোঁজে, মোস্তফা কে মুজেরী, জিন্নাতুন নাদিরা ও নিয়াজ মুজেরীর বাংলাদেশ: অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও কাঠামোগত রূপান্তর বই দুটি নতুন এসেছে। বিক্রেতারা জানান, এ ছাড়া আকবর আলি খানের আত্মজীবনী পুরানো সেই দিনের কথা, মহিউদ্দিন আহমদের প্রতিনায়ক ভালো চলেছে।
নতুন বই
তথ্যকেন্দ্রের হিসাবে গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৩১টি। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে আগামী এনেছে ফরহাদ মজহারের কবিতা সংগ্রহ ও আনোয়ারা সৈয়দ হকের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। অবসর এনেছে ড. মো. এমরান জাহানের গবেষণাগ্রন্থ মধ্যযুগের বাংলা সমাজ ও সংস্কৃতি, বিদ্যাপ্রকাশ এনেছে মোহিত কামালের উপন্যাস পরান চুল্লি, বিভাস এনেছে রবীন্দ্র গোপের কবিতাগ্রন্থ ইলেক্ট্রার কান্না, স্বপ্ন ’৭১ এনেছে সুজন সুপান্থর মুক্তগদ্য নীল সার্কাসের ঘোড়া।
বইমেলা আজ শনিবার চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আসবে আরও নতুন বইয়ের সম্ভার।
বাংলাদেশ: অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও কাঠামোগত রূপান্তর ১৯৭১-২০২১
স্বাধীনতার গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঘটেছে অভাবনীয় কাঠামোগত রূপান্তর। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের লেখা মানবিক উন্নয়নের সম্পর্ক ধরে প্রতিটি আর্থিক খাত নিয়ে বিশদ এই বই।
লেখকদের মধ্যে মোস্তফা কে মুজেরী কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেছেন। এখন ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওহগ) নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। জিন্নাতুন নাদিরা ঢাকায় সেন্টার ফর রিসার্চ ইনিশিয়েটিভসের চেয়ারপারসনের দায়িত্বরত। নিয়াজ মুজেরী ঢাকার সেন্টার ফর রিসার্চ ইনিশিয়েটিভসের নির্বাহী পরিচালক ও সিইও হিসেবে কর্মরত।