আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিপেটায় নুরুল হকসহ বেশ কয়েকজন আহত

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর কাকরাইলে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টি (জাপা) ও গণ অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। জাপার কার্যালয়ের সামনে দিয়ে গণ অধিকার পরিষদের একটি মিছিল যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিপেটায় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

গণ অধিকার পরিষদ বলেছে, গতকাল সন্ধ্যায় তারা মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় জাপার নেতা–কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালান। তবে জাপা বলেছে, মিছিল নিয়ে এসে জাপার নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালান গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা।

রাত সাড়ে ১০টার দিকে যোগাযোগ করা হলে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, জাপার হামলার প্রতিবাদে রাত সাড়ে ৯টার দিকে গণ অধিকার পরিষদের কার্যালয়ের সামনে সভাপতি নুরুল হক, তিনিসহ নেতা–কর্মীরা সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এতে সভাপতি নুরুল হক, তিনিসহ শতাধিক নেতা–কর্মী আহত হন। নুরুল হক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁকেসহ ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পরে বিজয়নগরে গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রাশেদ খান। তিনি বলেন, জাপার সঙ্গে আওয়ামী লীগ মিলে যৌথভাবে গণ অধিকারের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ সময় তিনি আরও বলেন, জাপা নেতা জি এম কাদেরের নামে মামলা থাকলেও তিনি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের দোসরদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়নি।

সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে
ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে জাপা ও গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে গণ অধিকার পরিষদের একটি মিছিল কাকরাইলে জাপা কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় জাপা কার্যালয় থেকে নেতা-কর্মীরা বেরিয়ে আসেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। আধঘণ্টা ধরে এ সংঘর্ষ চলার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মাসুদ আলম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তাঁদের মধ্যে পুলিশ পরিদর্শক আনিসুর রহমানকে (৪২) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাপার মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গণ অধিকার পরিষদ জাপাকে নিষিদ্ধ করা ও জাপার চেয়ারম্যানের গ্রেপ্তারের দাবিতে দুটি সভা করেছে। একটি রাজনৈতিক দলের এ রকম সভা করার যৌক্তিকতা আছে বলে তিনি মনে করেন না। তাঁরা সভা করে যাওয়ার সময় জাপার নেতা–কর্মীদের লক্ষ্য করে ইট ছোড়েন। এতে জাপার বেশ কয়েকজন নেতা–কর্মী রক্তাক্ত হন। পরে জাপার নেতা–কর্মীরা ধাওয়া দিলে দুই পক্ষের মধ্যে অনেকক্ষণ পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এরপর পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। শামীম হায়দার এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গতকাল রাতে নুরুল হকসহ গণ অধিকারের আহত নেতা–কর্মীদের দেখতে ঢাকা মেডিকেলে যান। নুরুল হকের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন। হামলার প্রতিবাদে রাতে বিক্ষোভ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

দুটি দলের সংঘর্ষে সহিংস পরিস্থিতি: আইএসপিআর

রাজধানীর কাকরাইলে গতকাল শুক্রবার রাতে দুটি রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাত আনুমানিক আটটায় রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় দুটি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রথমে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবে একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেড়ে গেলে তাঁরা সেনাবাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর আক্রমণ চালানো হয় এবং এ কারণে কয়েকজন সদস্য আহত হন।

আইএসপিআর জানায়, ঘটনার শুরুতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উভয় পক্ষকে শান্ত থাকতে ও শান্তিপূর্ণভাবে স্থান ত্যাগ করতে এবং দেশের বিদ্যমান আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করার জন্য অনুরোধ জানান। তবে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কিছু নেতা-কর্মী তা উপেক্ষা করে ‘মব ভায়োলেন্সের’ মাধ্যমে পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা করেন। তাঁরা সংগঠিতভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালান এবং আনুমানিক রাত ৯টার দিকে মশালমিছিলের মাধ্যমে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি করেন। এ সময় তাঁরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেওয়ার চেষ্টা চালান।

এ ছাড়া বিজয়নগর, নয়াপল্টন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সাধারণ জনগণের চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় এবং জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শান্তিপূর্ণ সমাধানের সব চেষ্টা তাঁরা অগ্রাহ্য করেন। এ কারণে জননিরাপত্তা রক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়। উল্লেখ্য, উদ্ভূত ঘটনায় সেনাবাহিনীর পাঁচ সদস্য আহত হন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সব ধরনের মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সরকারের এই সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করছে এবং জনমনে স্বস্তি ও নিরাপত্তা আনয়নে সব ধরনের মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে সদা প্রস্তুত রয়েছে। জননিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখতে সেনাবাহিনী সর্বদা বদ্ধপরিকর।

গভীর রাতে রাশেদের ব্রিফিং

দিবাগত রাত পৌনে একটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ব্রিফিং করেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান
ছবি: প্রথম আলো

রাত পৌনে একটার দিকে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, নুরুল হকের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কেন এই হামলার ঘটনা, কে নির্দেশ দিয়েছে, তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধানকে স্পষ্ট করতে হবে। নুরুল হকসহ তাঁদের ওপর যে হামলা হয়েছে, এ হামলার জন্য সরকারের কোনো নির্দেশনা ছিল কি না, তা জানাতে হবে।

রাশেদ খান বলেন, ‘নুরুল হকের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে, এটা আওয়ামী লীগের আমলেও কোনো নেতার ওপর হয়েছে বলে জানা নেই। সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী এভাবে একসঙ্গে অতীতে হামলা করেছে কি না, জানা নেই।’

আরও পড়ুন