ভূমি ও সম্পত্তিতে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলতে হবে

‘সংবিধান, আইন, নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক চুক্তির আলোকে ভূমি ও সম্পত্তিতে নারী এবং ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার’ শীর্ষক এক সেমিনারে আলোচকেরা
ছবি: এএলআরডির সৌজন্যে

বিশ্বব্যাপী নারীর ভূমির অধিকারের ক্ষেত্র অসম। ভূমিতে নারীর সম-অধিকারের বিষয়টি যেমন বৈশ্বিক, তেমনি অনেক বেশি স্থানিক বিষয়। ভূমি ও সম্পত্তিতে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলতে হবে।

‘সংবিধান, আইন, নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক চুক্তির আলোকে ভূমি ও সম্পত্তিতে নারী এবং ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মঙ্গলবার এ সেমিনার হয়। এর আয়োজন করে বেসরকারি সংগঠন এএলআরডি ও স্ট্যান্ড ফর হার ল্যান্ড ক্যাম্পেইন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এএলআরডির উপনির্বাহী পরিচালক এবং স্ট্যান্ড ফর হার ল্যান্ড ক্যাম্পেইনের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর রওশন জাহান মনি। সেমিনারে বক্তারা নারীর ভূমিসহ সম্পদে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাঁদের সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তার সুরক্ষায় একযোগে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এএলআরডির চেয়ারপারসন খুশী কবির অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।  
প্রবন্ধ উপস্থাপক তাঁর উপস্থাপনায় নারীর ভূমি ও কৃষির অধিকার, খাসজমির অধিকার, ভূমিকেন্দ্রিক নারীর সাক্ষরতার অবস্থা, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষায় রাষ্ট্রের অবহেলা ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি  সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ ছাড়া তিনি সুনির্দিষ্টভাবে ৩০টি সুপারিশ তুলে ধরেন।  

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য শিরীন আখতার বলেন, ‘নারীর সম-অধিকার আদায়ের জন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষির জায়গাটায় আমাদের অবস্থানটা প্রস্তুত করতে হবে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, নারীর সম-অধিকার, নারীর অধিকার—সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নারীদের সামগ্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে। যত বেশি আমরা আমাদের অধিকারের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলতে পারব, কথা বলতে পারব; তত বেশি আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের পথে এগিয়ে যেতে পারব। লড়াইয়ের জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে হবে।’

মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘আইন, বিবাহ-তালাক, সন্তানের অভিভাবকত্ব—এই তিন বিষয়ের ক্ষেত্রে আমরা অভিন্ন পারিবারিক আইনের কথা বলেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি।’

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক বলেন, নারী ও ট্রান্সজেন্ডারের ভূমি আন্দোলনের বিষয়টি শুধু আলোচনায় আনলে হবে না, এই আন্দোলনে সুধী সমাজ ও সর্বস্তরের মানুষকে যুক্ত করতে হবে।

রাঙামাটি চাকমা সার্কেলের উপদেষ্টা রানী ইয়েন ইয়েন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ১১টি এবং সমতলে ৪৪টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ বাস করে। প্রতিটি জাতির আলাদা আলাদা ভূমি বণ্টনের নিয়ম আছে, বৈষম্যও আছে। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সমাজের ক্ষেত্রে অভিন্ন পারিবারিক আইন দরকার আছে। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা খর্ব হবে কি না, বিষয়টি নিবিড়ভাবে চিন্তা করা দরকার।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক  আইনুন নাহার বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী নারীর ভূমির অধিকারের ক্ষেত্র অসম। ভূমিতে নারীর সম-অধিকারের বিষয়টি যেমন বৈশ্বিক, তেমনি অনেক বেশি স্থানিক বিষয়। আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ, গণমাধ্যম—সবকিছুই কাঠামোবদ্ধ। সে জন্য আমরা বৈচিত্র্যকে ধরে রাখতে পারি না। এই কাঠামোগত জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে।’

এএলআডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, রাষ্ট্র যেভাবে আইন প্রণয়ন করে, প্রক্রিয়াটি বৈষম্যমূলক, নারীবিদ্বেষী, পিতৃতান্ত্রিক, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও প্রান্তিক মানুষের জন্য বঞ্চনামূলক। এই আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে খুশী কবির বলেন, উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে নারী ও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সংগঠিত হতে হবে। বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

এতে মুক্ত আলোচনা পর্বে বক্তব্য দেন জয়া হিজড়া, জাহানারা বেগম, মুসকান হিজড়া, ফরিদা পারভিন, সারা মারান্ডি, সুধা সরকার, সুলেখা ম্রং প্রমুখ।