মেট্রোরেল চলাচলে বিঘ্ন হলে কোনো তথ্য দেয় না কর্তৃপক্ষ

মেট্রোরেলফাইল ছবি

ঝড়ের হাওয়া বেশ সকাল থেকেই শুরু হয়েছে। অফিসগামী মানুষ, যাঁরা মেট্রোরেলে চড়েন, তাঁরা আজ পড়লেন আরেক বিপদে। স্টেশনে গিয়ে যাত্রীরা দেখেন মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ। যদিও পরে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছে, তবে নিয়মিত বিরতিতে নয়। কিন্তু এই সমস্যার কারণ নিয়ে কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ সময় মুখে কুলুপ এঁটে ছিল। সমস্যার সমাধানের আগপর্যন্ত কর্তৃপক্ষ ফোন ধরে না, স্টেশনের কর্মীরাও জানেন না কী হয়েছে। তাঁদের এ আচরণ এটাই প্রথম নয়।

এ অবস্থা দেখে মনে হতে পারে, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল); অর্থাৎ মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বেশ গুরুগম্ভীর। কিন্তু তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের সর্বশেষ পোস্টটিতে তা মনে হবে না, তারা রসিক বটে। গতকাল রোববার রাত পৌনে ১০টার দিকে তারা খালিজ টাইমসের একটি খবর শেয়ার করেছে। খবরটি ছিল, ‘দুবাই মেট্রোর রেড লাইন দু ঘণ্টা ব্যাহত থাকার পর পুনরায় চালু হয়েছে।’ আমজনতাও কম যান না। একজন সেই পোস্টে  কমেন্ট করেছেন, ‘স্কুলে পরীক্ষায় খারাপ করলে আমিও বাসায় এসে বলতাম ক্লাসের সবাই খারাপ করসে।’

এই ‘রসিকতার’ পেছনের কারণ হচ্ছে, এক দিন আগে; অর্থাৎ ২৫ মে সন্ধ্যার দিকে বিদ্যুৎ-সংযোগ ব্যাহত হওয়ায় দেড় ঘণ্টার মতো মেট্রোরেলসেবা বন্ধ ছিল। ডিএমটিসিএল তাদের ফেসবুক পেজে ২৫ মে রাত প্রায় ১০টার দিকে দুঃখ প্রকাশ করে পোস্ট দিয়েছে। তবে এটাই তাদের প্রথম দুঃখ প্রকাশ করে দেওয়া একমাত্র পোস্ট।

২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশে প্রথম মেট্রোরেল জনগণের জন্য উন্মুক্ত হয়। এই দেড় বছরে অন্তত ১০ বার মেট্রোরেল চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এর মধ্যে ৯ বার বন্ধ ছিল এবং একবার দেরিতে ছাড়া হয়েছিল। কিন্তু সর্বশেষ ২৫ মে ছাড়া আর একবারের জন্যও ডিএমটিসিএল বন্ধের কারণ ফেসবুকে জানায়নি বা দুঃখ প্রকাশ করেনি। তারা নিজেদের বিভিন্ন প্রোগ্রাম, নিউজ এবং মেট্রোরেলের সময়সূচি জানিয়ে পোস্ট দিয়ে থাকে।

সরকারের সব সেবা ডিজিটাল, সব অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে, সব তথ্য জানা যায় অনলাইনে—এই শুনে এখনকার প্রজন্ম বড় হচ্ছে। ‘যাচ্ছে’ বটে, তারপরও অনেক ক্ষেত্রে ‘কিন্তু’ রয়ে যায়। এই যেমন, মেট্রোরেলের কথা ধরা যাক। তাদের একটি ওয়েবসাইট আছে, ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজও আছে।

নির্ভরযোগ্য তথ্য ও সেবার জন্য ওয়েবসাইট করা হয়ে থাকে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সাইটে একটি নোটিশ বোর্ড আছে, যেখানে কর্মীদের যোগদান, সভার সূচি, নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের কারণে ট্রাফিক পরিস্থিতিসহ নিজেদের বিভিন্ন অফিস আদেশ রয়েছে। সাইটে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির অপশনে একটিমাত্র বিজ্ঞপ্তি, যা ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বরের। কিন্তু মেট্রোরেলসেবা ব্যাহত-সংক্রান্ত কোনো তথ্য ওয়েবসাইটে নেই।

আধুনিক বাহন ও যানজটের শহরে জনজীবনে একটু স্বস্তির অপর নাম মেট্রোরেল। কিন্তু এই স্বস্তি কখনো কখনো চরম অস্বস্তি ডেকে আনে, যখন হুটহাট করে মেট্রোরেলসেবা বন্ধ হয়ে যায়। কখন ঠিক হবে, কতক্ষণ অপেক্ষা করলে পরের ট্রেনটি আসবে, জানেন না কেউ। অবশ্য যাত্রীরা জানবেন কীভাবে, সংবাদকর্মীদেরই তা জানতে গলদঘর্ম হতে হয়।

আজ যখন মেট্রোরেল চলাচল ব্যাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়, তখন প্রথম আলো থেকে ডিএমটিসিএলের জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম ভূঁইয়াকে সকাল সোয়া আটটার দিকে ফোন করা হলে তিনি জানান, বন্ধ হওয়ার কোনো খবর তাঁর কাছে নেই, তিনি জেনে জানাবেন।

কিন্তু এরপর এক ঘণ্টার বেশি সময় তাঁকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। পরে সোয়া নয়টার দিকে তিনি জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যার কারণে চলাচল বন্ধ আছে। প্রথম আলোর আরও একজন প্রতিবেদক ডিএমটিসিএলের এমডি থেকে শুরু করে একাধিক কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন করেন মেট্রোরেল চলাচল বন্ধের বিষয়ে জানার জন্য। কিন্তু আর কেউ সাড়া দেননি।

যতবারই মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যাত্রীরা জানতে পারেন না আসলে কী হয়েছে, কখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে স্টেশনগুলো থেকেও খুব কম ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য জানা যায়।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সকাল থেকে রাজধানীতে বৈরী আবহাওয়া শুরু হয়েছে। প্রচণ্ড বাতাস এবং বিদ্যুৎ সরবরাহেও বিঘ্ন ঘটেছে। যাত্রীদের অভিযোগ, বৈরী পরিস্থিততে মেট্রোরেল চলাচলে যদি কোনো সমস্যার সম্ভাবনা থাকে বা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চলাচল বন্ধ রাখতে হয়, সেটা কর্তৃপক্ষ আগেই জানাতে পারে। তাতে মানুষের ভোগান্তি হয় না।