সার্জেন্ট মোর্শেদা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বললেন, শুক্রবার বিকেলে তিনি নতুন বাজারে দায়িত্ব পালন করছিলেন। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা ছিল। চাকা পরিবহন বাস কাউন্টারের একজন কর্মী এসে জানান, রাস্তার অন্য পাশে এক নারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তিনি সম্ভবত অন্তঃসত্ত্বা। তারপর ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তার অন্য পাড়ে গিয়ে দেখেন, ওই নারী ফুটওভার ব্রিজের রেলিং ধরে বসে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। এ সময় তাঁর স্বামী ওমনাথ বাবু সঙ্গেই ছিলেন।

মোর্শেদা বলেন, তিনি যাওয়ার সময় কনস্টেবল তানিয়া সুলতানাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। ওই নারীকে একটু ফাঁকা জায়গায় ফুটপাতে আনা হয়। বাস কাউন্টার থেকে ছাতা নিয়ে জায়গাটি আড়াল করার চেষ্টা করা হয়। এক নারী পথচারীকেও সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করা হলে তিনিও সাহায্যে এগিয়ে আসেন।

মোর্শেদা বলেন, ‘শিমলার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তাঁকে রাস্তার এপারে আনা বা কোনো গাড়িতে তোলা সম্ভব ছিল না। বাচ্চা প্রসব হয়ে গেল। কিন্তু মা ও বাচ্চার নাড়ি কাটার তো কোনো ব্যবস্থা নেই। মা প্রায় অচেতন হয়ে যাচ্ছেন। তখন সরকারের জরুরি সহায়তা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে বলি। অ্যাম্বুলেন্স আসতে ৭ মিনিট সময় লাগে। মা ও বাচ্চার নাড়ি কাটা হয়নি বলে খুব সতর্কভাবে মা ও বাচ্চাকে একসঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে বেসরকারি একটি হাসপাতালে পাঠাই, নিজেও হাসপাতালে যাই।’

মোর্শেদা জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর শিমলাকে অস্ত্রোপচারকক্ষে নিয়ে চিকিৎসকেরা পরবর্তী ব্যবস্থা করেন। মোর্শেদা হাসপাতাল থেকে আবার নতুন বাজারে তাঁর ডিউটির জায়গায় চলে আসেন। আজ শনিবার দুপুরে শিমলা রানীর স্বামী ওমনাথ বাবু এসে জানান, হাসপাতালে বিল এসেছে ১০ হাজার ৮০০ টাকা। তিনি জুতা সেলাই করে সংসার চালান। তাঁর কাছে তো এত টাকা নেই।

মোর্শেদা বলেন, ‘ওমনাথের সঙ্গে হাসপাতালটিতে গিয়ে পুরো ঘটনা বর্ণনা করি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করি, এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও ভালো কাজের পাশে থাকার জন্য ৩ হাজার ৩০০ টাকা রেখে বাকি টাকা আর নেয়নি। পরে মা বাচ্চাকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন। শিমলা আমাকে তাঁর বাড়িতে দাওয়াতও দিয়েছেন।’

১০ বছর বয়সী এক মেয়ের মা সার্জেন্ট মোর্শেদা জানালেন, সন্তান প্রসব করানোর বিষয়ে তাঁর কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। ঘটনার সময় শিমলা যাতে ভয় না পান, সে চেষ্টা করছিলেন। আশপাশ থেকে পুরুষেরা ভিড় করছিলেন। এই জটলা কমানোরও দায়িত্ব পালন করতে হয়। মা ও বাচ্চার নাড়ি দ্রুত কাটতে না পারলে বড় কোনো অঘটন ঘটে কি না, সে চিন্তাও করতে হয়েছে। সব মিলে খোলা আকাশের নিচে কোনো নারীকে সন্তান প্রসব করতে সহায়তা করাটা ছিল অন্য রকম অভিজ্ঞতা। মা ও বাচ্চা ভালো আছে, এটাই সবচেয়ে বড় কথা।

শিমলা জানালেন, তাঁরা বেরাইদে ঋষিপাড়ায় থাকেন। ৫ বছর ও দেড় বছর বয়সী আরও দুই সন্তান আছে। জুতা সেলাই করে স্বামীর আয়-উপার্জন খুব বেশি হয় না। ঘটনার দিন স্বামীর সঙ্গে চিকিৎসক দেখাতে বের হয়েছিলেন। শুক্রবার থাকায় ওই চিকিৎসক ছিলেন না। বাসে ফেরার সময়ই বুঝতে পারেন কোমরে ব্যথা হচ্ছে। সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ছিল ১৭ মার্চ। তাই তিনি ভেবেছিলেন এমনিতেই তাঁর ব্যথা হচ্ছে। বাস থেকে নামার পর বুঝতে পারেন বাচ্চার মাথা প্রায় বের হয়ে আসছে। তারপর সার্জেন্টসহ অন্যরা সহায়তা করেন। শিমলা জানান, বাচ্চার জন্মের ষষ্ঠ দিনে বাচ্চার নাম রাখবেন।