ঢাবিতে নানা কর্মসূচিতে জাতীয় শোক দিবস পালিত
নানা আয়োজনে আজ সোমবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এসব কর্মসূচির মধ্যে ছিল শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, খাবার বিতরণ ও দোয়া মাহফিল৷
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন ও হলে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়, উত্তোলন করা হয় কালো পতাকা৷ সকালে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান৷ সকালেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়৷ উপাচার্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা পরিদর্শন করেন৷
পরে টিএসসি মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা হয়৷ সভায় সভাপতির বক্তব্যে মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের এক ঘৃণ্য দিন৷ এই দিনেই ঘাতকের নির্মম বুলেটে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার শাহাদাতবরণ করতে হয়৷ তাঁকে হত্যার মাধ্যমে জাতির ইতিহাসকে উল্টো পথে নেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়৷ উপাচার্য আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন৷ শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়ে তিনি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটাতে চেয়েছিলেন৷ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন এবং তাঁর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে৷’
এই আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ, সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদসহ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, কর্মচারী সমিতি, কারিগরি কর্মচারী সমিতি ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা বক্তব্য দেন৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন৷ সভার শুরুতে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়৷
জোহরের নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ প্রতিটি হল, আবাসিক এলাকার মসজিদে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল করা হয়৷ এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার অন্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়৷
‘ডুজার আলোকচিত্র প্রদর্শনী’
বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ দিনব্যাপী বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ ও ঐতিহাসিক ছবি নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা)৷ সকালে টিএসসিতে ‘মহাকালের খেরোখাতায় বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে এ প্রদর্শনী করা হয়৷
সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডুজার প্রধান উপদেষ্টা মো. আখতারুজ্জামান প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন৷ এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামুল হক ভূইয়া, প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী, ডুজার সভাপতি মামুন তুষার, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামসহ অন্য সদস্যরা৷
ডুজার এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ, বিশ্ব গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিভিন্ন ছবি দেখানো হয়৷ দিনভর আগত দর্শনার্থী ও শিক্ষার্থীরা ঘুরে ঘুরে ছবিগুলো দেখেন৷
জাতীয় শোক দিবসে আজ দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসিসংলগ্ন ফটকে সর্বস্তরের মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সমাজসেবাবিষয়ক উপসম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত৷ সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, পথচারী, দর্শনার্থী, ভাসমান দোকানিসহ কয়েক শ মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়৷
এদিকে বঙ্গবন্ধুর স্মরণে ‘সেলুলয়েডে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ৷ আয়োজনে আজ সন্ধ্যা সাতটায় টিএসসি প্রাঙ্গণে সোহেল মোহাম্মদ রানার পরিচালিত ‘মুজিব আমার পিতা’ এবং রাত আটটায় নাগিসা ওশিমা পরিচালিত ‘রহমান: দ্য ফাদার অব বেঙ্গল’ চলচ্চিত্রটি দেখানো হবে৷ আয়োজনটি সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে৷