তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভাবান এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। একাধারে শিক্ষাবিদ, কবি, গীতিকার ও প্রাবন্ধিক। খ্যাতি ছিল সুবক্তা ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান সঞ্চালনায়। প্রশাসক হিসেবেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে। তিনি অধ্যাপক আবু হেনা মোস্তফা কামাল।
গতকাল বুধবার ছিল তাঁর ৮৮তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি অধ্যাপক আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্মরণে একক বক্তৃতা আয়োজন করে। একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এই আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। ‘আবু হেনা মোস্তফা কামালের কবিতা ভুবন’ শীর্ষক একক বক্তৃতা প্রদান করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ-এর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
সিরাজগঞ্জ জেলার নাগরৌহা গ্রামে আবু হেনা মোস্তফা কামালের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৩ মার্চ। ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন তুখোড় মেধাবী। এসএসসিতে পাবনা জেলা স্কুল থেকে রাজশাহী বোর্ডে মেধাতালিকায় ত্রয়োদশ ও ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসিতে ঢাকা বোর্ডে সপ্তম স্থান অধিকার করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। পরে কমনওয়েলথ শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে লন্ডন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ‘তুমি যে আমার কবিতা’, ‘অনেক বৃষ্টি ঝরে’, ‘অপমানে তুমি সেদিন জ্বলে উঠেছিল বর্ণমালা’, ‘নদীর মাঝি বলে’ এমন অনেক জনপ্রিয় গানে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা আধুনিক ও দেশাত্মবোধক গানের ভুবন। আপন যৌবন বৈরী, যেহেতু জন্মান্ধ ও আক্রান্ত গজল—এই তিনটি কাব্যগ্রন্থসহ বাংলা ও ইংরেজিতে বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি।
ভাষা ও সাহিত্যে অবদান রাখায় তিনি ১৯৮৭ সালে রাষ্ট্রীয় একুশে পদকে ভূষিত হন। এ ছাড়া বিভিন্ন পদক পেয়েছেন। ১৯৮৯ সালের ২৩ আগস্ট তিনি ইন্তেকাল করেন।
একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, আবু হেনা মোস্তফা কামাল একজন অসাধারণ সাহিত্যসাধক এবং জীবনসাধক। তাঁর কবিতা ও গানে জীবনের আনন্দিত রূপ যেমন অনুপম ব্যঞ্জনায় ভাস্বর, তেমনি তাঁর প্রবন্ধ-গবেষণায় যুক্তি শৃঙ্খলা এবং সুনিপুণ বিশ্লেষণ আমাদের বিস্মিত করে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে স্বল্পকালীন দায়িত্বকালেও তিনি সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বল্পপ্রজ কবি। কবিতার সংখ্যার চেয়ে গুণমান তাঁর কাছে ছিল অধিকতর বিচার্য। কবিতায় তিনি ছিলেন অনিবার্য শব্দের সন্ধানী। তিনি কবিতায় সমাজের বহু নির্মম সত্যকে সহজ মাত্রায় তুলে ধরেছেন। আবু হেনা মোস্তফা কামালের জীবদ্দশায় প্রকাশিত তিনটি কবিতা গ্রন্থের পাশাপাশি অগ্রন্থিত ও অপ্রকাশিত কবিতাসমূহেও জীবনের সংবেদ অসাধারণ শিল্পসুষমায় উপস্থাপিত।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বল্পায়ু জীবন পেয়েছেন কিন্তু সৃষ্টিকর্মে বিপুলতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তাঁর সাহিত্যসাধনা এবং জীবনচর্যায় সুরুচি এবং সৌন্দর্যের প্রতিফলন ঘটেছে সব সময়। একজন শিক্ষক হিসেবে যেমন তিনি অনন্য, তেমনি একজন কবি-লেখক হিসেবেও তুলনারহিত।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সায়েরা হাবীব।