আয়শা খানমের সাহস আজও অনুপ্রেরণা জোগায়

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রয়াত সভাপতি নারীনেত্রী আয়শা খানমের প্রতিকৃতি তাঁর মেয়ে ঊর্মি খানের হাতে তুলে দেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর
ছবি: প্রথম আলো

নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আজীবন সংগ্রাম করেছেন আয়শা খানম। তিনি ছিলেন নারী আন্দোলনের অগ্রসৈনিক, গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক এক মানুষ। তাঁর কথা বলার সাহস আজও অনুপ্রেরণা জোগায়।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রয়াত সভাপতি নারীনেত্রী আয়শা খানম স্মরণে ‘আয়শা খানম স্মারকগ্রন্থ—মুক্তিপথের অনিঃশেষ অভিযাত্রী’র প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এভাবে তাঁকে স্মরণ করলেন। আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটায় ‘আয়শা খানম স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনা পরিষদ-নাগরিক কমিটির’ উদ্যোগে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, আজকের সময়ের প্রেক্ষাপটে আয়শা খানমের কথা বলার সাহস আজও অনুপ্রেরণা জোগায়। তিনি নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় বক্তব্য জোরালোভাবে তুলে ধরতেন। কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যুর পর নারী আন্দোলনকারী হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তিনি দক্ষতা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে নেতৃত্ব ধরে রেখেছিলেন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ষাটের দশকে আন্দোলন–সংগ্রামে ও পরে মুক্তিযুদ্ধে বড় অবদান রয়েছে আয়শা খানমের। তাঁর জীবন প্রবাহিত হয়েছে সমতার ধারা, অগ্রসরতার ধারার মধ্য দিয়ে।

আয়শা খানমকে বিদ্রোহী ও সাহসী এক অগ্নিমশাল বলে অভিহিত করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেন, বিশ্বসভ্যতাকে মানবতার দিকে ধাবিত করতে তিনি এক লড়াকু যোদ্ধা ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, পরিবর্তিত সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সমাজের পশ্চাৎপদ নারীদের কল্যাণের লক্ষ্যে নারী আন্দোলনকে সংগঠিত করতে এবং নারীর জাগরণ তৈরির জন্য আয়শা খানমের জীবনদর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটেছে এই স্মারকগ্রন্থে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার রোধের আন্দোলনে আয়শা খানম কায়িকভাবে না থাকলেও তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে থাকবেন।  

আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ও আয়শা খানমের পরিবারের সদস্য সৈয়দা মুনিরা আক্তার।

‘আয়শা খানম স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনা পরিষদ’-এর সভাপতি অনুপম সেনের লিখিত বক্তব্যের অংশ পাঠ করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহযোগী সম্পাদক গৌতম বসাক।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আয়শা খানম স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনা পরিষদের সদস্য সচিব সীমা মোসলেম।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী তানিয়া মান্নান। আবৃত্তি করেন লায়লা আফরোজ।

অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের চিত্রকলা বিভাগের শিক্ষক ও কার্টুনিস্ট শিশির ভট্টাচার্যের আঁকা আয়শা খানমের প্রতিকৃতি তাঁর মেয়ে ঊর্মি খানের হাতে তুলে দেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল।

অনুষ্ঠানে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, শিল্পী আবদুল মান্নান, হামিদুজ্জামান খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সাজেদা শওকত, দীপ্ত ফাউন্ডেশনের জাকিয়া কে হাসান, সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার, ওয়াজেদুল ইসলাম, ছবি বিশ্বাস, শিল্পী অশোক কর্মকার প্রমুখ।