সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনার পরও চাঁদাবাজি

চাঁদাবাজি
প্রতীকী ছবি

ফুটপাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে ‘গণপরিসরে স্ট্রিট ভেন্ডর ব্যবস্থাপনা’ নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী বা হকাররা।

তবে সিটি করপোরেশন এ ব্যবস্থাপনা হাতে নেওয়ার পরও চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ করেছেন হকাররা। তাঁরা বলছেন, লাইনম্যানদের (যাঁরা চাঁদা তোলেন) হাতে দৈনিক চাঁদার টাকা তুলে দিতে হয়। চাঁদা না দিলে মারধর, এমনকি দোকান তুলে দেওয়ার হুমকিও দেন তাঁরা।

শনিবার সিটি করপোরেশনের জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভায় এসব অভিযোগ করেন হকাররা। মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর–সংলগ্ন সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৪-এর আঞ্চলিক কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় হকার জলিল শিকদার বলেন, অনেক দিন ধরে তিনি মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর–সংলগ্ন এলাকায় ব্যবসা করছেন। তাঁকে দৈনিক ২০০ টাকা চাঁদা ও মাসে দেড় হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। ঈদ কেন্দ্র করে আমিনুল নামের একজন লাইনম্যান তাঁর কাছে দুই হাজার টাকা দাবি করেছেন।

জলিল আক্ষেপ করে বলেন, ‘এই যে এত এত টাকা দেই, এর পরও মাঝে যখন আমি কয়েক দিনের জন্য বাড়িতে গিয়েছিলাম, এসে দেখি, আমার জায়গা অন্য একজনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ওই জায়গা ফেরত পেতে আমার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছিল।’

সভায় উপস্থিত শাওন নামের আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, ফুটপাতে ব্যবসা করতে তাঁকে সপ্তাহে দুই হাজার ও মাসে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়। সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় আসার পরও লাইনম্যানদের চাঁদাবাজি চলছে।

সভায় উপস্থিত হকাররা আমিনুল, জাফর ও মুসা নামের তিনজন চাঁদাবাজের নাম বলেন। গত ১১ মার্চ মিরপুর–১০-এর ফুটপাতে চাঁদাবাজি নিয়ে ‘বছরে চাঁদাবাজি ৪ কোটি টাকা, ভাগ “সবার” পকেটে’ শিরোনামে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনেও চাঁদাবাজ হিসেবে জাফর ও মুসার নাম জানিয়েছিলেন হকাররা। এ ছাড়া তখন সিটি করপোরেশনের অ্যাপের নামে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার বিষয়টিও তাঁদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এলাকা ছেড়ে গেলেই আবার ফুটপাত দখল হয়ে যায়। তাই ঢাকা উত্তর সিটি  ‘গণপরিসরে স্ট্রিট ভেন্ডর ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। মিরপুর-১০ নম্বরে পরীক্ষামূলক ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর আওতায় ফুটপাতের নির্ধারিত অংশে বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হকাররা ব্যবসার সুযোগ পাবেন। বাকি সময়ে ফুটপাত খালি রাখতে হবে।

সভায় উপস্থিত ঢাকা উত্তর সিটির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা বলেন, ‘মেয়র আমাকে এ কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন, যাতে কোনো চাঁদাবাজ হকারদের ওপর অত্যাচারের সুযোগ না পায়। ঢাকা উত্তর সিটি ফুটপাতের চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা ছাড়া এই যুদ্ধে জয় সম্ভব নয়।’

১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হুমায়ুন রশিদ বলেন, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকার ফুটপাতে ২ হাজার ৪৩৬টি দোকান রয়েছে। এই দোকানগুলোর ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে চাঁদাবাজদের রুখে দেওয়া সম্ভব।

সভায় মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘মিরপুর মডেল থানার নামে কোনো টাকা তোলা যাবে না। যদি কেউ তোলে, তা হলে আপনারা সরাসরি থানায় অভিযোগ করবেন। আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। তবে মূল রাস্তায় কোনো দোকান বসানো যাবে না।’

সভায় অন্যদের মধ্যে দক্ষিণ সিটির অঞ্চল-৪-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আবেদ আলী, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম, দেড় শতাধিক হকার ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগী বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন