নারীর সম–অধিকার ও সমসুযোগ প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের বিনিয়োগ করতে হবে

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা। ৯ মার্চ, রাজধানীর আসাদ অ্যাভিনিউয়েছবি: প্রথম আলো

নারীর সম-অধিকার ও সমসুযোগ প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রীয়ভাবে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের দাবি জানিয়েছেন বেসরকারি সংগঠন এএলআরডিসহ ১৩টি অধিকারভিত্তিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার (৯ মার্চ) ১৩টি সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা এ দাবি জানান।

রাজধানীর আসাদ অ্যাভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এএলআরডি, নিজেরা করি, আরবান, বাদাবন সংঘ, বেলা, ব্লাস্ট, বারসিক, আইপিডিএস, কাপেং ফাউন্ডেশন, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, নাগরিক উদ্যোগ, এনডিএফ এবং তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ড ও পোস্টারে বিভিন্ন দাবির কথা লেখা ছিল। মানববন্ধন থেকে যে দাবিগুলো জানানো হয়েছে, তা পড়ে শোনান এএলআরডির অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক সানজিদা খান।

দাবিগুলো হলো নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন, নীতিমালা বাতিল করতে হবে। শর্তহীনভাবে ভূমিহীন নারীদের খাসজমি দেওয়া এবং খাসজমি নীতিমালায় অগ্রাধিকার তালিকা থেকে বিধবা নারীর ক্ষেত্রেÿপুত্রসন্তান থাকার শর্ত বাতিল করতে হবে।

জাতিসংঘের সিডও সনদের ধারা ২ এবং ১৬.১ (গ)-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালায় সম্পদ ও উত্তরাধিকারে নারী ও পুরুষের সমান অভিগম্যতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন করা, বাজার ব্যবস্থাপনায় নারী কৃষকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, নারী কৃষকদের কৃষি কার্ডপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা, নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সমান মজুরিপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা, নারীর পারিবারিক কাজের মূল্যায়ন করা, নারীর প্রতি সব ধরনের নির্যাতন ও বৈষম্য দূর এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।

পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীর নিরাপত্তা ও ভূমি অধিকার নিশ্চিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারী প্রতিনিধিদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, জলবায়ু প্রভাব মোকাবিলায় জাতীয় নীতি ও কৌশলে নারীর প্রতি বৈষম্য ও বাড়তি দুর্ভোগ নিরসনকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

মানববন্ধনে নারী সাংবাদিক নাসিমুন আরা হক বলেন, বাস্তবে নারীর সম–অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না হলে নারী দিবস পালনের কোনো অর্থ থাকবে না। তিনি আরও বলেন, ভূমিতে নারীর জন্মগত অধিকার। নারীকে বঞ্চিত রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব না।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার সঞ্জীব দ্রং বলেন, নারীরা ঐতিহাসিকভাবে বৈষম্যের শিকার। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৫০টি আসন, শিক্ষাবৃত্তি, চাকরিতে কোটাসহ সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপের ফলে নারীরা এগিয়ে এসেছে। এখন মেয়েশিশুকে স্কুলে পাঠানোসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

মানববন্ধনে এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, দেশে আইন ও নীতিতে নারীর সম–অধিকারের কথা থাকলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। ভূমি, উত্তরাধিকার, মজুরি, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারে মেয়ে ও নারীদের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।