সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা বাড়ির নথি ও প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে অবস্থিত যে বাড়ি আব্দুস সালাম মুর্শেদী দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, সেই বাড়ির মূল নথি ও প্রতিবেদন কোনো ধরনের ব্যর্থতা ছাড়াই আগামী ১৬ জানুয়ারির মধ্যে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যানের প্রতি এ নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। পাশাপাশি ওই বাড়ি নিয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশনকে দিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আব্দুস সালাম মুর্শেদী সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী ও সাবেক ফুটবলার। অভিযোগ ওঠা বাড়িটি রাজধানীর গুলশান-২-এর ১০৪ নম্বর সড়কে অবস্থিত ২৯ নম্বর বাড়ি (সি. ই. এন. (ডি)-২৭)।

আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে পরিত্যক্ত (‘খ’ তালিকাভুক্ত) বাড়িটি দখলের অভিযোগ তুলে তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক রিট করেন। এর শুনানি নিয়ে গত ১ নভেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে বাড়িসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র হলফনামা আকারে ১০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়। ধার্য তারিখ ১৩ নভেম্বর পক্ষগুলো সময়ের আবেদন জানালে আদালত ২৭ নভেম্বর দিন রাখেন। সেদিন মূল নথি দাখিলের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ১ ডিসেম্বর শুনানির দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি ওঠে।

‘বিচারাধীন ওই মামলার (রিট) বিষয়বস্তুকে স্পর্শ করে—এমন কিছু না লিখতে গণমাধ্যমের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আদালতের কার্যধারা নিয়ে লেখায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকবে।
মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী

এদিকে ওই বাড়ি নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গঠিত তিন সদস্যের কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আজ গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়—এ প্রসঙ্গও শুনানিতে ওঠে।

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, মূল নথি দাখিলের জন্য এর আগে সময় নেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদনও আসেনি। বিষয়টি বিচারাধীন। অথচ জালিয়াতি করে বাড়ি নিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা সিদ্ধান্ত দেওয়ার মতো। এই যদি হয় অবস্থা...। গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে, তা ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন আব্দুস সালাম মুর্শেদীর আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ।

রিট আবেদনকারীর আইনজীবী অনীক আর হক ওই বাড়ি নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়ে শোনাতে গেলে তাঁর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘পেপার পড়ে লাভ হবে না। আমরা দেখব নথি ও কাগজ। আইনগত বিষয়ে বলবেন।’ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দুদককে দিতে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য শুনানিতে আরজি জানান সংস্থাটির আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। ওই বাড়ি নিয়ে রাজউকের কাছ থেকে এখনো কোনো কাগজপত্র পাননি বলে শুনানিতে জানান সংস্থাটির আইনজীবী জাকির হোসেন মাসুদ।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের আদেশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দুদককে দিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিচারাধীন ওই মামলার (রিট) বিষয়বস্তুকে স্পর্শ করে—এমন কিছু না লিখতে গণমাধ্যমের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আদালতের কার্যধারা নিয়ে লেখায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকবে। এ ক্ষেত্রে বুঝতে অসুবিধা হলে বেঞ্চ অফিসার ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর সঙ্গে তাঁরা কথা বলতে পারেন বলে আদেশে এসেছে।’