ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে প্রাইভেট কারের চাপায় গুরুতর আহত রিকশা আরোহী আফরোজা আহমেদের মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচার হয়েছে। ওই দুর্ঘটনায় তাঁর মেরুদণ্ডের নিচের দিকে পাঁচটি হাড় ভেঙে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রায় ৭ ঘণ্টা ধরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়।
আজ শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে আফরোজার শ্বশুর রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনায় পুরো পরিবার তছনছ হয়ে গেছে। তাঁর সুখের সংসার ছিল। ছেলে ইমরান একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পুত্রবধূ আফরোজা একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। তাঁর সুস্থ হতে কত দিন লাগবে, তিনি পুরোপুরি সুস্থ হবেন কি না, সেটিও নিশ্চিত করে বলছেন না চিকিৎসকেরা।
এদিকে ওই দুর্ঘটনায় আহত আফরোজার স্বামী ইমরান রেজা আরেকটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। গতকাল তিনি ছাড়া পেয়েছেন। তাঁর বাঁ হাতের চামড়া উঠে গিয়ে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে। তাঁকে স্ক্র্যাচে ভর করে হাঁটতে হচ্ছে। দুর্ঘটনার সময় তিন বছর বয়সী মেয়ে এনায়া রেজাও বাবা-মায়ের সঙ্গে ছিল। সে সামান্য আহত হয়েছিল। রফিকুল ইসলাম বলেন, এনায়া এখন ভয়ে গাড়িতে উঠতে চাইছে না। গাড়ি দেখলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে।
এই ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলতে রাজি নন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়। এক কিশোরকে গাড়ি চালাতে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা এমন কিশোরকে গাড়ি চালাতে দেন, মূল অপরাধী তাঁরাই। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে জন্য সবাইকে এসব বিষয়ে নজর দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এদিকে দুর্ঘটনায় আহত রিকশাচালক হাবিবুর রহমান পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। তাঁর বাড়ি গাজীপুরে। তাঁর যে মুঠোফোন নম্বর পাওয়া গেছে, সেটিতে কল করে বন্ধ পাওয়া যায়।
গত রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে বেপরোয়া গতিতে চলা একটি প্রাইভেট কার একটি রিকশাকে চাপা দেয়। ওই ঘটনায় ইমরান, আফরোজা, তাঁদের মেয়ে এনায়া এবং রিকশাচালক হাবিবুর রহমান গুরুতর আহত হন। ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় ধারণ করা এই ঘটনার ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, একটি প্রাইভেট কার রাস্তার মোড় ঘুরেই একটি রিকশাকে বেপরোয়া গতিতে চাপা দেয়। গাড়িটির গতি এতই বেশি ছিল যে রিকশাটিকে রাস্তার এক পাশ থেকে অন্য পাশে নিয়ে যায়। রিকশাচালক ও যাত্রীরা গাড়ির নিচে চাপা পড়েন।
পুলিশ বলছে, গাড়িটি চালাচ্ছিল এক কিশোর। সে মোহাম্মদপুরের একটি স্থানীয় বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সালমান হায়দার নামের এক তরুণ তাকে (কিশোর) গাড়ি চালাতে দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেছেন ইমরানের বাবা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, গাড়িটির মালিক সালমান হায়দারের এক বন্ধু, যিনি অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। গাড়িটি সালমানের গ্যারেজ রাখতে দেওয়া হয়েছিল। তিনি বিভিন্ন সময় গাড়ি নিয়ে বের হতেন। তবে তাঁর কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। ঘটনার পর দুজনকে স্থানীয় জনতা আটক করে পুলিশে দিয়েছিল। মামলা হওয়ার পর তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়। আদালত সালমানকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আর কিশোরকে শিশু (কিশোর) উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।