রাজধানীর খিলগাঁওয়ে চার রেস্তোরাঁকে সাত লাখ টাকা জরিমানা করলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত

রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় আজ বুধবার অভিযান চালায় রাজউকছবি: সাজিদ হোসেন

অগ্নিঝুঁকি ও ভবন ব্যবহারের ব্যত্যয়সহ নানা অসংগতির কারণে চারটি রেস্তোরাঁকে সাত লাখ টাকা জরিমানা করেছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ বুধবার রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।

চারটি রেস্তোরাঁর মধ্যে ডমিনোস পিৎজাকে দুই লাখ টাকা, কেএফসিকে দুই লাখ, সিক্রেট রেসিপিকে দুই লাখ ও চায়না ল্যান্ড রেস্টুরেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

রাজউকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অফিসকক্ষ হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে যে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে এসব প্রতিষ্ঠান রেস্তোরাঁ চালু করেছে। এ ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের কেউ ফায়ার সার্ভিস থেকে নেওয়া লাইসেন্স দেখাতে পারেনি।

খিলগাঁওয়ের ২৫/বি ঠিকানায় ১৪ তলা ভবনের নিচের চারতলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে রেস্তোরাঁ ভাড়া দিয়েছেন ভবনের মালিক। এই ভবনেই ডমিনোস পিৎজা, কেএফসি ও সিক্রেট রেসিপি, ক্রিমসন কাপ ও আল-কাদেরিয়া পার্টি সেন্টার রয়েছে। অভিযানের সময় ক্রিমসন কাপ ও আল-কাদেরিয়া পার্টি সেন্টার বন্ধ পাওয়া গেছে।

দুপুর ১২টার দিকে রাজউকের কর্মকর্তারা এই ভবনে ঢুকে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ব্যবসার প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র দেখতে চান। এ সময় ভবনের মালিককেও ডেকে আনা হয়। ভবনের মালিক কবির হোসেন রাজউকের কর্মকর্তাদের বলেন, ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান সব পক্ষের অনুমতি নিয়ে ভবন করছে, এমন কাগজপত্র তাঁকে দেখিয়েছেন।

তখন রাজউকের কর্মকর্তারা ভবনের মালিককে বলেন, আবাসিকের পাশাপাশি ভবনে বাণিজ্যিক যে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে, সেটা কেবল অফিসকক্ষ হিসেবে ব্যবহারের জন্য, রেস্তোরাঁ করার জন্য নয়।

এ সময় ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ওপর দায় চাপিয়ে ভবনের মালিক বলেন, তিনি এসবের কিছুই জানেন না।

পরে এই ভবনে থাকা তিনটি রেস্তোরাঁ পরিদর্শন করে দুই লাখ টাকা করে ছয় লাখ টাকা জরিমানা করেন রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল ইসলাম। তিনটি প্রতিষ্ঠানকেই জরিমানার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক করতে এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।

এরপর এই ভবনের পাশেই চায়না ল্যান্ড রেস্টুরেন্ট নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন রাজউকের কর্মকর্তারা। ওই প্রতিষ্ঠানও ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স দেখাতে পারেনি। এ ছাড়া ওই রেস্তোরাঁয় জরুরি বহির্গমনের পথ থাকলেও তা বোঝার কোনো উপায় ছিল না। এসব কারণে ওই প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

অভিযান শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানকে তাঁরা জরিমানা করেছেন, তাদের কেউই ভবন ব্যবহারের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তাই তাদেরকে এক মাস করে সময় দেওয়ার পাশাপাশি জরিমানা করা হয়েছে।

ভবনের মালিকের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এমন প্রশ্নে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কোনো সদুত্তর দেননি।

কেএফসি খিলগাঁও শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. সুমন প্রথম আলোকে বলেন, ভবনে রেস্তোরাঁ করার অনুমতি নেই, বিষয়টি তাঁরা জানতেন না। তাঁদেরকে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তাঁরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হালনাগাদ করে নেবেন।

খিলগাঁও তালতলা ব্যবসায়ী কল্যাণ পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম অভিযান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারের কোনো সংস্থা আগে বলেনি, কী কী কাজ করলে ভালো হবে। এখানে শত শত মানুষ কাজ করেন। অভিযানের কারণে বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। সরকার আমাদের সময় দিলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক করে নেব।’