ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান আগের তুলনায় বেড়েছে: উপাচার্য মাকসুদ কামাল

চারুকলার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল। ঢাকা, ২০ ডিসেম্বরছবি: আশরাফুল আলম

অতীতের তুলনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান অনেক বেড়েছে বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার-সিম্পোজিয়ামসহ যেসব কার্যক্রম হয়, সেগুলোর ডকুমেন্টেশনের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়টা সেভাবে তুলে ধরা যাচ্ছে না।

আজ বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ওসমান জামাল মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে মাকসুদ কামাল এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষদের ৮টি বিভাগ ও জয়নুল গ্যালারিতে সাবেক-বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশেষ প্রদর্শনী হচ্ছে। ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী আয়োজনের এই উদ্বোধনী পর্বে উপাচার্য প্রধান অতিথি ছিলেন।

দুপুর ১২টার দিকে চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে দিনের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল। পরে ওসমান জামাল মিলনায়তনে আলোচনা পর্বে তিনি বলেন, ‘অনেকে ভাবেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান কমে গেছে। আমি কিছু বোদ্ধার কাছ থেকে শুনেছি, এখন থেকে ৩০–৫০ বছর আগেও নাকি বলা হতো যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান কমে গেছে। এ রকমটা সব সময়ই বলা হয়। কিন্তু আমাদের উপলব্ধি হচ্ছে, অতীতের তুলনায় আমাদের মান অনেক বেড়েছে। যে জায়গাটিতে আমাদের সংকট, সেটি হলো পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যেভাবে অগ্রসর হয়েছে, জাতি হিসেবে আমরা সেভাবে অগ্রসর হতে পারিনি। সেই প্রভাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরও আছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার-সিম্পোজিয়ামসহ যেসব কার্যক্রম হয়, সেগুলোর ডকুমেন্টেশনের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়টা সেভাবে তুলে ধরা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন মাকসুদ কামাল। এখন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও আয়োজনের হালনাগাদ তথ্য নিয়মিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

ইমেরিটাস অধ্যাপক শিল্পী রফিকুন নবী চারুকলার স্মৃতিচারণা করেন। ঢাকা, ২০ ডিসেম্বর
ছবি: আশরাফুল আলম

চারুকলার অর্জন তুলে ধরতে গিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘চারুকলা প্রাঙ্গণে এলে মনটা ভালো হয়ে যায়। শিক্ষার সঙ্গে যে উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতার সরাসরি সম্পর্ক আছে, এখানে এলে সেটি বোঝা যায়। শুধু শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা আমাদের জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখেছে।’

আলোচনা পর্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক শিল্পী রফিকুন নবী। চারুকলার এই প্রবীণ শিক্ষক বলেন, ‘চারুকলা আমার চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট। আমরা জীবন দিয়ে চারুকলাকে তৈরি করেছি। দীর্ঘ সময় ধরে আমি চারুকলার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৬৪ সালে এখানে শিক্ষক হয়েছিলাম। এর উঠতি-পড়তি দেখেছি। পাকিস্তান আমলে একটা বৈরী পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে চারুকলা তৈরি হয়েছিল। চারুকলা প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সমাজকে পরিবর্তন ও রুচিশীল করা। এটা একটা যুদ্ধের মতো ছিল। এখন চারুকলা সার্বিকভাবে বিশেষভাবে কাউন্টেড ফ্যাক্টর।’

১৯৪৮ সালে ঢাকার সদরঘাটের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ছোট পরিসরে শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে কলেজ, ইনস্টিটিউট এবং ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদ হিসেবে চারুকলার যাত্রার ইতিহাস তুলে ধরেন অনুষদের ডিন শিল্পী নিসার হোসেন। তিনি বলেন, ‘চারুকলার এই অগ্রযাত্রায় দলমত–নির্বিশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই আমাদের সহযোগিতা ও সমর্থন করেছেন। সে জন্য সব শিক্ষকের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। আজ বিশেষ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে চারুকলার ৭৫ বছর পূর্তি উদ্‌যাপনের প্রক্রিয়ার মধ্যে আমরা ঢুকলাম। এই প্রদর্শনীতে পুরো চারুকলাটাকে দেখা যাবে।’

চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রবিউল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা পর্বে অন্যদের মধ্যে অনুষদের সাবেক ডিন শিল্পী আবুল বার্‌ক্‌ আলভী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা বক্তব্য দেন। ইমেরিটাস অধ্যাপক মু. হাশেম খানের এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও ব্যক্তিগত কারণে তিনি আসতে পারেননি।