ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শুরু

ষষ্ঠীর দিনে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি। রাজধানীর রমনা দুর্গাপূজা মণ্ডপের সামনে বসে পূজার জন্য খই থেকে ধানের খোসা বাছাই করছিলেন রুমা ঘোষ, পার্বতী ঘোষ ও শুক্লা সরকার। ২০ অক্টোবর
ছবি: প্রদীপ সরকার

ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। মণ্ডপে মণ্ডপে আজ শুক্রবার সকালে ষষ্ঠীপূজা অনুষ্ঠিত হয়।

রাজধানীর রমনার কালীমন্দিরেও সকালে ষষ্ঠীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই মণ্ডপের পুরোহিত হরিচাঁদ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল সাতটায় আমাদের মণ্ডপে ষষ্ঠীপূজা শুরু হয়। শেষ হয় সকাল সাড়ে আটটার দিকে। এর মধ্য দিয়েই দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে।’

সন্ধ্যায় পূজামণ্ডপে বোধন হবে জানিয়ে হরিচাঁদ চক্রবর্তী বলেন, বোধনের মাধ্যমে দেবী জাগ্রত হবেন।

রমনা দুর্গাপূজা মণ্ডপের সামনে বসে পূজার জন্য খই থেকে ধানের খোসা বাছাই করছিলেন রুমা ঘোষ, পার্বতী ঘোষ ও শুক্লা সরকার। রুমা ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘খই বাছাই করছি। এই খই দিয়ে পূজার উপকরণ তৈরি করা হবে।’

পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেলেও রমনা কালীমন্দিরের দুর্গাপূজা মণ্ডপ ঢেকে রাখা হয়েছে। পুরোহিত হরিচাঁদ চক্রবর্তী জানান, প্রতিমায় কিছু কাজ বাকি আছে। সে জন্য ঢেকে রাখা হয়েছে। তবে সন্ধ্যায় বোধনের আগে মণ্ডপ খুলে দেওয়া হবে।

প্রতিমা ঢাকা থাকায় দেবী-দর্শন ছাড়াই পুণ্যার্থীরা এসে ঘুরে যাচ্ছেন এই মণ্ডপ থেকে।

হিন্দু শাস্ত্রমতে, শ্বশুরবাড়ি কৈলাস থেকে কন্যারূপে দেবী বাপের বাড়ি বেড়াতে মর্ত্যলোকে আজ আসছেন। অসুর শক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোকচ্যুত হয়েছিলেন। এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে একত্র হন দেবতারা। অসুর শক্তির বিনাশে অনুভূত হলো এক মহাশক্তির আবির্ভাব। দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত হলেন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা। আবির্ভূত হওয়ার পর দেবী দুর্গা আসুরিক শক্তিকে বিনাশ করে ত্রিভুবন রক্ষা করেন। এ কারণে দুর্গা কখনো দুর্গতিনাশিনী, কখনো সংকটনাশিনী।

রমনা দুর্গামণ্ডপ ঢেকে রাখা হয়েছে। এখনো চলছে মণ্ডপ সাজানোর কাজ
ছবি: প্রদীপ সরকার

ষষ্ঠীতে ঘোটক বা ঘোড়ায় চড়ে দেবী আসবেন। ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গা বিদায়ও নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। দেবীর আগমন ও বিদায় একই বাহনে হলে তা অশুভ ইঙ্গিত। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রোগ-শোক, হানাহানি-মারামারি বেড়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের তথ্যানুযায়ী, দেশে এ বছর দুর্গাপূজা হবে ৩২ হাজার ৪০৮টি মণ্ডপে।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী সব মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকাসহ সারা দেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।

সবুজবাগের দুই পূজার আয়োজন

রাজধানীর সবুজবাগের আহম্মদবাগের মহামায়া মৈত্রী সংসদের সভাপতি বীরেন্দ্র চন্দ্র দাশ ও সাধারণ সম্পাদক দীপক চন্দ্র দাস তাঁদের মন্দিরে পুজোর প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

সবুজবাগের বাসাবো এলাকার শ্রীশ্রী বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান পরিচালনা কমিটিও দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছে। মন্দির কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন দাশ জানিয়েছেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্যান্য অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আগামীকাল সন্ধ্যা সাতটায় উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। রাত নয়টায় স্বপ্ন বিকাশ কলাকেন্দ্রের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হবে নৃত্যনাট্য ‘আনন্দময়ীর আগমনে।’ রোববার সন্ধ্যা সাতটায় থাকবে আরতি প্রতিযোগিতা আর নয়টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সোমবার সন্ধ্যায়ও আরতি প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। আর মঙ্গলবার বিজয়া দশমীর এসব প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ হবে। রাতে নাটক মঞ্চস্থ হবে।