প্রকল্পে সংখ্যাগুরুদের জন্য বরাদ্দ ৯৬.৮৫%, সংখ্যালঘুদের ৩.১৫%

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাজেট বৈষম্য শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেটে দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনা করে তারা বলছে, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য পরিচালন ব্যয় খাতে মন্ত্রণালয়ের পরিচালন ব্যয় বাদে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের জন্য মোট বরাদ্দের হার ৯৭ দশমিক ৮৭ এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য ২ দশমিক ১৩।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চলমান প্রকল্পগুলোর মোট প্রকল্প ব্যয়ের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দ ৯৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দ ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।

আজ সোমবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাজেট বৈষম্য শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব তথ্য তুলে ধরেছে ঐক্য পরিষদ।

অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য রাখেন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম ২০০৮ সালের পর সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য কমবে। আগে যা বরাদ্দ হতো, এখনো তা আছে। বরং আরও কমছে।’ সরকারের মধ্যে শক্তি বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট পরিচালন ব্যয়ের পরিমাণ ৩১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তার মধ্যে সচিবালয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিচালন ব্যয় ১৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বাদ দেওয়ার পর ৩০৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকার মধ্যে ২৯৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা দেশের ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সাড়ে ছয় কোটি টাকা। অর্থাৎ ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের জন্য মোট বরাদ্দের হার ৯৭ দশমিক ৮৭ এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্যে ২ দশমিক ১৩, যা আগের অর্থবছরে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৯৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্যে মোট বরাদ্দ ছিল ২ দশমিক ২৫ শতাংশ।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চলমান প্রকল্পে বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, বর্তমানে এই মন্ত্রণালয়ের অধীন চলমান প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ৯ হাজার ৯৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা। তার মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দ ৯ হাজার ৬১৯ কোটি ১৩ লাখ বা ৯৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দ ৩১২ কোটি ৯৫ লাখ বা ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।

এ অবস্থায় ঐক্য পরিষদ চারটি দাবি জানিয়েছে। সেগুলো হলো ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও কল্যাণে জাতীয় রাজস্ব বাজেট থেকে বার্ষিক বরাদ্দ প্রদান করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টগুলোকে ‘ফাউন্ডেশন’-এ রূপান্তরিত করে বিরাজমান ধর্মীয় বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে সব ধর্ম সম্প্রদায়ের জন্য উন্নয়নের কার্যক্রমকে অধিকতর সম্প্রসারিত করা। ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঠিক শুমারির উদ্যোগ গ্রহণ করা। প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মডেল মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনে বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক, সভাপতিমণ্ডলী সদস্য কাজল দেবনাথ, সুব্রত চৌধুরী, বাসুদেব ধর ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন মণীন্দ্র কুমার নাথ।