তিন মাসে ১৪৩ রোহিঙ্গার হাতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট, গ্রেপ্তার ২৩: ডিবি

ডিএমপি মিডিয়ার সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ঢাকা, ২৬ ফেব্রুয়ারিছবি: সংগৃহীত

একটি প্রতারক চক্র গত তিন মাসে ১৪৩ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি উল্লেখ করে পাসপোর্ট তৈরি করে দিয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ, যাদের বিদেশে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে তা দিয়ে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরি করানো হতো। এই চক্রের ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আজ সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

রাজধানীর আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডায় অভিযান চালিয়ে গত শুক্রবার পাসপোর্ট তৈরির কাগজপত্র, পাসপোর্ট ও কম্পিউটারসহ ১৩ জনকে (তিন রোহিঙ্গা নারী) গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রোববার কক্সবাজার, টাঙ্গাইল ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে দুই আনসার সদস্যসহ চক্রের আরও আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত শুক্রবার গ্রেপ্তার হওয়া সবাই পাঁচ দিনের রিমান্ডে আছেন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রতারক চক্রটির একটি দল গ্রামের সাধারণ মানুষদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহে করে। আরেকটি দল কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি থেকে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে আসে। অন্য একটি দল এদের জন্য ভুয়া জন্ম সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে দেয়। সর্বশেষে দলটি ঢাকাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে আনসার সদস্যদের সহায়তায় পাসপোর্ট তৈরির ব্যবস্থা করে।

হারুন অর রশীদ বলেন, শুধু রোহিঙ্গাদের নয়, দেশের ভেতরে থাকা দাগি আসামি ও অপরাধীদেরও পাসপোর্ট বানিয়ে দিতেন চক্রের সদস্যরা।

ডিবি জানায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে উম্মে ছলিমা ওরফে ছমিরা, মোছা. মরিজান ও মো. রশিদুল হলেন রোহিঙ্গা। গ্রেপ্তার আইয়ুব আলী ও মো. মোস্তাকিম হলেন রোহিঙ্গা দালাল। গ্রেপ্তার দুই আনসার সদস্য জামসেদুল ইসলাম ও মো. রায়হান। প্রতারক চক্রটির গ্রেপ্তার হওয়া বাকি সদস্যরা হলেন, রাজু শেখ, শাওন হোসেন ওরফে নিলয়, ফিরোজ হোসেন, তুষার মিয়া, শাহজাহান শেখ, শরিফুল আলম, জোবায়ের মোল্লা, শিমুল শেখ, আহমেদ হোসেন, মাসুদ আলম, আব্দুল আলিম, মাসুদ রানা, ফজলে রাব্বি ওরফে শাওন, রজব কুমার দাস ওরফে দীপ্ত, আল-আমিন ও মো. সোহাগ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১৭টি পাসপোর্ট, ১৩ টি জাতীয় পরিচয়পত্র, ৫ টি কম্পিউটার, ৩ টি প্রিন্টার, ২৪ টি মুঠোফোন ও পাসপোর্ট তৈরির কাজপত্র জব্দ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনের পরে ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের সাদিয়া সুলতানা একজন গৃহিণী। তাঁর পাসপোর্ট নেই, বিদেশ যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গা উম্মে ছলিমার পাসপোর্ট তৈরি দেয় প্রতারক চক্রটি। তিনি বলেন, এভাবে গত তিন মাসে ১৪৩ জন রোহিঙ্গার ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করে দেয় এই চক্রের সদস্যরা।