ছেলে এএসপি আনিসুল হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিলেন বাবা

এএসপি আনিসুল করিমফাইল ছবি

ছেলে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিলেন বাবা ফাইজুদ্দিন আহম্মেদ। ফাইজুদ্দিন পুলিশের সাবেক উপপরিদর্শক ছিলেন।

ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে তিনি এই সাক্ষ্য দেন। আগামী ২৯ মে মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন বিচারক শেখ ছামিদুল ইসলাম।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী গোলাম নবী।

আদালত–সংশ্লিষ্টসূত্রগুলো বলছে, মাইন্ড এইড হাসপাতালে এএসপি আনিসুল করিমকে নির্যাতন করে কীভাবে মেরে ফেলেছিল, সেটির বর্ণনা দেন বাবা ফাইজুদ্দিন আহম্মেদ। তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড শেষ হওয়ার পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাঁকে জেরা শুরু করেন। আংশিক জেরা শেষ হওয়ায় আগামী ধার্য তারিখে আবারও জেরার জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।

এর আগে এ হত্যা মামলায় গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন মাইন্ড এইড হাসপাতালের পরিচালক আরিফ মাহমুদ, ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদ আমিন, ফাতেমা খাতুন, হাসপাতালের সমন্বয়ক রেদোয়ান সাব্বির, কর্মচারী মাসুদ খান, জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম কুমার পাল, লিটন আহম্মেদ, সাইফুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ আল আমিন।

২০২০ সালের ৯ নভেম্বর আনিসুল করিমকে আদাবর থানাধীন মাইন্ড এইড হাসপাতালে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়। মামলাটি তদন্ত করে ২০২২ সালের ১০ মার্চ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় আদাবর থানার পুলিশ। পরে আদালত অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

অভিযোগপত্রের তথ্য বলছে, এএসপি আনিসুল করিম সময়মতো বিভাগীয় পদোন্নতি না পাওয়ায় তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ঘটনার তিন থেকে চার দিন আগে চুপচাপ হয়ে যান তিনি। বিষয়টি পরিবারের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন এএসপি আনিসুল করিমকে মনোচিকিৎসক দেখানোর সিদ্ধান্ত হয়।

অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার আগের দিন আনিসুল করিমের একজন ভগ্নিপতি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। তখন তিনি রোগীর স্বজনদের পরামর্শ দেন, সরকারি মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চিকিৎসাব্যবস্থা তেমন উন্নত নয়। রোগীকে সেবা করার মতো পর্যাপ্ত জনবল সেখানে নেই। তাই রোগীকে আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসা ভালো হবে। তিনি নিয়মিত সেখানে চেম্বার করেন। পরে ৯ নভেম্বর সকাল আটটার সময় এএসপি আনিসুল করিমকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন আনিসুল করিমকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। নিজে হাসপাতালের পরিচালক আরিফ মাহমুদ জয়কে ফোন দেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার সময় আনিসুলকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

অভিযোগপত্রের তথ্য বলছে, এএসপি আনিসুল করিম মাইন্ড এইড হাসপাতালে আসার পর সবার সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করেন। তবে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে হাসপাতালের পরিচালক আরিফ মাহমুদ সিগারেট খাওয়ার কথা বলে আনিসুলকে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যান। আরিফ ছাড়াও রেদোয়ান, মাসুদ খান, জোবায়ের, তানভীর, তানিফ, সজীব, অসীম, লিটন ও সাইফুল চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে আনিসুলকে নিয়ে যান। কক্ষে নিয়ে যাওয়ার পরপরই আনিসুলকে মারধর করে ফেলে দেওয়া হয়। তখন আসামি মাসুদ খান ও তানভীর হাসান রোগীর পিঠের ওপর চেপে বসেন। আর অসীম আনিসুলের দুই হাত পিছমোড়া দিয়ে বেঁধে ফেলেন। সজীব আনিসুলের ঘাড়ে কনুই দিয়ে আঘাত করেন। তানিফ ঘাড় ও মাথায় আঘাত করেন ও আনিসুলের মাথার ওপর চেপে বসেন। লিটন, জোবায়ের ও সাইফুল রোগীর পা ও শরীর চেপে ধরে রাখেন। এর কিছুক্ষণ পর আনিসুল করিম নিস্তেজ হয়ে পড়েন।