সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ‘ট্রুথ কমিশন’ প্রয়োজন: এমএসএফের সেমিনার

এমএসএফের উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামালসহ অন্যরা। রাজধানীর ধানমন্ডি, আজ ৪ ফেব্রুয়ারিছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ এখন ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। স্বৈরশাসনামলের অন্যায়–অপরাধের বিচার, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা, সংস্কার ও মানবাধিকারের মতো বিষয় এই সময়ে সামনে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ট্রানজিশনাল জাস্টিস বা ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যার জন্য ‘ট্রুথ কমিশন’ প্রয়োজন।

আজ মঙ্গলবার মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) উদ্যোগে আয়োজিত ‘ট্রানজিশনাল জাস্টিস বা ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচার’–বিষয়ক সেমিনারে এসব কথা উঠে এসেছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে এমএসএফের কার্যালয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

সেমিনারে বিশিষ্ট গবেষক ও রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের ((রিব) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান শামসুল বারী প্রধান বক্তা হিসেবে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে তিনি বলেন, অশান্ত, অস্বাভাবিক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ব্যবস্থাকে ‘ট্রানজিশনাল জাস্টিস’ বলা যায়, যাঁর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথ নির্ণয় করা যায়। এর মাধ্যমে মানবাধিকায় লঙ্ঘনের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি দূর করে আইনের শাসন ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করতে হয়।

শামসুল বারী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব এ সময় শান্তি ফিরিয়ে আনা। নাগরিক সমাজের ভূমিকা নির্ভর করে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। ট্রানজিশনাল জাস্টিসে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কথা ভাবা হয়েছে—ট্রুথ কমিশন, অপরাধীদের বিচার, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা, অপরাধের চিহ্ন ধরে রাখতে জাদুঘর, নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কার, শুদ্ধীকরণ, ক্ষমা চাওয়া ও ক্ষমা করার বিষয়।

ট্রুথ কমিশন প্রসঙ্গে শামসুল বারী বলেন, স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর নতুন সরকারের একটি কমিশন গঠন করা দরকার, যারা স্বৈরশাসনামলে সংঘটিত অন্যায়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঠিক তথ্য তুলে ধরবে, যার ভিত্তিতে বিরোধ মীমাংসার পথ অনুসন্ধান করে সামাজিক আস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে মানবাধিকারকর্মীদের ভূমিকা প্রসঙ্গে শামসুল বারী বলেন, এমন পরিস্থিতিতে সমাজে লিঙ্গ ও যৌন সহিংসতা বেড়ে যায়। এ সময়েই মানবাধিকারকর্মীদের বের হয়ে আসতে হবে, নয়তো ভবিষ্যৎ অন্ধকার। ৫ আগস্টের আগে ও পরে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের জন্য মানবাধিকারকর্মীদের নিরপেক্ষভাবে কথা বলতে হবে। মানুষ পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, মানবাধিকারের অর্থ শুধু বিচার না। এর সঙ্গে সমাজে সম্প্রীতি ও সহাবস্থানও জড়িত। এখন প্রতিকারের চেয়ে প্রতিশোধমূলক চিন্তা বেশি কাজ করছে। মানবাধিকারকর্মীদের এ জায়গায় নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে।

সেমিনারের উদ্বোধন করেন এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন এএলআরডি, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, রিব, স্পেস ফাউন্ডেশন, বাঙ্গালি সমগ্র জাদুঘর ও নিজেরা করির প্রতিনিধিরা।