২২ জন সংখ্যালঘু সংসদ সদস্য কিছুই করলেন না আমাদের জন্য: রানা দাশগুপ্ত

রমনা কালীবাড়ি পরিচালনা কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা।
ছবি: হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সৌজন্যে

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘এখন জাতীয় সংসদে ২২ জন সংখ্যালঘু সংসদ সদস্য। কিন্তু এই ২২ জন কার জন্য কবে কী ভূমিকা রাখলেন, আজ পর্যন্ত আমরা জানতেও পারলাম না।’

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নারিন্দার মাধ্ব গৌড়ীয় মঠ এবং রমনা কালীবাড়ি পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে এসব কথা বলেন রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘আশির দশকে যখন আমরা জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে আমাদের অংশীদারত্ব চাওয়া শুরু করেছিলাম, তখন সংসদে সংখ্যালঘু সদস্য ছিলেন মাত্র দুজন—সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও সুধাংশু শেখর হালদার। তাঁরা তখন সংসদে আমাদের অধিকার ও ন্যায্যতার প্রশ্নে সোচ্চার ছিলেন। আজ সংসদে সংখ্যালঘু সদস্য ২২ জন। তাঁরা গত ১৪ বছরে কিছুই করলেন না আমাদের জন্য।’

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সম্প্রতি পাকিস্তানে একটি মন্দির ধ্বংসের প্রতিবাদে সেখানকার মাত্র একজন সংখ্যালঘু পার্লামেন্ট মেম্বার তাঁদের পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে উচ্চ কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছেন। তাঁর প্রতিবাদের ফলে পাকিস্তানের তৎকালীন ইমরান খানের সরকার সেখানকার সংখ্যালঘুদের কাছে ক্ষমা চেয়ে মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। কথা ছিল, মাঠের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বলটিকে আমরা পার্লামেন্টের সামনে নিয়ে যাব আর সেখান থেকে আমাদের পা থেকে বল নিয়ে সংসদ সদস্য বন্ধুরা সংসদের ভেতরে সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষায় ভূমিকা রাখবেন।’

রানা দাশগুপ্ত আরও বলেন, ‘তাঁদের (সংসদ সদস্যরা) পার্লামেন্টে পাঠানোর জন্য আমরা যথাযথ ভূমিকা পালন করেছি। কিন্তু পার্লামেন্টে যাওয়ার পর তাঁরা আমাদের কথা বেমালুম ভুলে গেছেন। তাই তাঁদের ওপর ভরসা না করে আমাদের রাজপথের আন্দোলনের ওপরই নির্ভর করতে হবে। সম–অধিকার ও সমমর্যাদা ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে এ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।’

রানা দাশগুপ্ত আজ আরও বলেন, ‘যে সংবিধানের জন্য মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ আত্মদান করেছেন, যে সংবিধান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়ে গেছেন, আজকের বাংলাদেশে সেই সংবিধান নেই। জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বঙ্গবন্ধুর সংবিধানের মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রকে বাদ দিয়ে তার পরিবর্তে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযোজন করেছিলেন। আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফলে সংবিধানের মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র ফিরে এলেও রাষ্ট্রধর্ম রয়ে গেছে। আমরা এই সংবিধানের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি।’

রানা দাশগুপ্ত বলেন, চার দশক ধরে রাষ্ট্রে যে অপরাজনীতির চর্চা চলেছে, তার ফল হিসেবে আজকের বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আজকের প্রশাসনে জামায়াত-হেফাজত ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। আজকের আওয়ামী লীগও একাত্তরের বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ নয়।

মাধ্ব গৌড়ীয় মঠের সভাপতি গিরিধারী মোদীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মঠের সাধারণ সম্পাদক উৎপল রায়, বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার, সাবেক সচিব অশোক মাধব রায়, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, রবীন্দ্রনাথ বসু, ছাত্র ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিপন বাড়াইক প্রমুখ।

অন্যদিকে রমনা কালীবাড়ি ও মা আনন্দময়ী আশ্রমে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন কালীবাড়ির সভাপতি উৎপল সাহা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন কালীবাড়ির সহসভাপতি বাবুল বিশ্বাস, সুজন মণ্ডল, গোকুল সাহা, কোষাধ্যক্ষ পরাণ কৃষ্ণ সাহা, হরিচাঁদ মন্দিরের সভাপতি কালীপদ মৃধা প্রমুখ।

দুটো সভায় ঐক্য পরিষদের নেতারা ২২ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৪৮ ঘণ্টার গণ–অনশন ও গণসমাবেশ এবং ৬ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ সফল করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।