দলবল নিয়ে ফুটপাতের হকার উচ্ছেদ আটকালেন কাউন্সিলর

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনার সময় ঢাকা উত্তর সিটির কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদের ওপর চড়াও হন কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল এলাকায় ফুটপাত ও সড়কের জায়গা দখল করে বসা হকার ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালাচ্ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটির কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ। এ সময় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম লোকজন নিয়ে অভিযানে বাধা দেন। ‘পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে’ অভিযানে যাওয়া ওই কর্মকর্তা চলে আসেন।

মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে টাউনহল বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ এবং সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, অভিযানে কাউন্সিলর কার্যালয়ের নিচে থাকা ফল ব্যবসায়ীদের কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়। তবে ব্যবসায়ীরা জরিমানা দিতে রাজি না হওয়া তাঁদের পণ্য ভ্যানে ওঠানো হচ্ছিল। এ সময় দলবল নিয়ে কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা উত্তর সিটির এক কর্মকর্তা বলেন, কাউন্সিলর কার্যালয়ের নিচে এবং কাঁচাবাজারের দিকে প্রায় ৯টি ফলের দোকান আছে। ফুটপাত ও রাস্তার জায়গায় দোকান দেওয়ায় এসব দোকানের মালিককে জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে সাতজন জরিমানা দেন। দুজন রাজি না হওয়ায় তাঁদের দোকানের পণ্য (ফল) ভ্যানে তোলা হচ্ছিল। এ সময় হকার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অভিযান পরিচালনকারীকে বাধা দেন।

এ বিষয়ে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া অঞ্চল-৫-এর নির্বাহী মোতাকাব্বীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে মালমাল রাখায় ৯ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর মধ্যে দুজন জরিমানা পরিশোধে রাজি না হলে তাঁদের পণ্য জব্দ করা হয়।

মোতাকাব্বীর আহমেদের ভাষ্য, ‘অভিযানের সময় হঠাৎ করে কাউন্সিলর নিজেই ব্যবসায়ীদের সবাইকে ডেকে সেখানে জড়ো করেন। অভিযান বন্ধ করতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। কাউন্সিলরের সঙ্গে থাকা লোকজন এ সময় রীতিমতো মারমুখী ছিল। পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে আমি চলে আসি।’

কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর (মোতাকাব্বীর আহমেদ) সঙ্গে আজ সকাল ১০টা থেকে তিন ঘণ্টা বৈঠক করেছি। বৈঠক শেষ করেই তিনি আমার অফিসের নিচে থাকা দোকানগুলোর মধ্যে চারটির মালিককে ২০ হাজার টাকা করে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।’

কাউন্সিলরের দাবি, ‘তাঁকে গিয়ে আমি বললাম, ভাই আপনি মিটিং করে এলেন, আমারে বললেনও না। আমি সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর। তিনি বলেন, না আপনারে বলার কিছু নাই। আমি বললাম, কাউন্সিলরের অফিসের নিচে দোকান, আমাকে বলা আপনার উচিত ছিল।’

অভিযানে বাধা দেওয়ার বিষয়ে কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের কাজ, আমি একজন কাউন্সিলর আমি কেন বাধা দেব? পরিস্থিতি ও রকম কিছু খারাপও হয়নি। হকারেরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। আমি সেখানে যাওয়ার পরে স্বাভাবিক হয়েছে। আমি অভিযানে বাধা দিইনি।’

ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম দেশের বাইরে আছেন। তাঁর অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বে আছেন প্যানেল মেয়র ঢাকা উত্তর সিটির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা। ঘটনাটি তাঁকে জানানো হয়েছে বলে প্রথম আলোকে জানান মোতাকাব্বীর আহমেদ।

জামাল মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রথমে কাউন্সিলরই আমাকে ঘটনা সম্পর্কে জানান। তাৎক্ষণিক আমি কাউন্সিলরকে এসব করতে মানা করে লোকজন সরাতে বলি। এরপর দুই পক্ষকেই ঠান্ডা করেছি। মেয়র দেশে ফিরলে আলোচনা করে এর সমাধান করা হবে।’