তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে বাধা দিচ্ছে কোম্পানিগুলো

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে তামাকবিরোধী তিনটি সংগঠন
ছবি: প্রজ্ঞার সৌজন্যে

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার দাবিতে প্রতীকী লাশের কফিন নিয়ে আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে তামাকবিরোধী তিনটি সংগঠন। সেগুলো হলো প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান), অ্যান্টিটোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা) ও প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠন। প্রজ্ঞার পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে বছরে তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যান। আইন সংশোধনে যত দেরি হবে, তামাকজনিত মৃত্যু ততই বাড়তে থাকবে। মানববন্ধন শেষে আয়োজকদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, তামাকের ব্যবহার কমাতে সংশোধনীর মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে খসড়া সংশোধনী প্রস্তুত, ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং অংশীজনের মতামত নেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো সরকারের এই মহতী উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করতে নানাবিধ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা ও পদক্ষেপগুলো তামাক কোম্পানির ব্যবসায়িক ও অন্যান্য স্বার্থ থেকে সুরক্ষা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

মানববন্ধনে আরও জানানো হয়, বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। দেশে তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতায় বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়, যা তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের চেয়ে অনেক বেশি। তামাক ব্যবহারজনিত এ ক্ষয়ক্ষতি ও ভয়াবহতা উপলব্ধি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং এ লক্ষ্য অর্জনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০১৬ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রতীকী লাশের কফিন নিয়ে আজকের মানববন্ধনে অংশ নেন বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা
ছবি: প্রজ্ঞার সৌজন্যে

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনীতে যেসব প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বিলুপ্ত করা; বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য বা প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা; সব ধরনের খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ এ ধরনের সব পণ্য উৎপাদন, আমদানি ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা।

আজকের মানববন্ধনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন, টিসিআরসি, ডরপ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, নাটাব, ধূমপান মাদক ও দুর্নীতিবিরোধী ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহছানিয়া মিশনসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।