ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ছাদধস,কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক

কক্ষটির ছাদের আস্তর খসে রড বেরিয়ে গেছে
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল-৫–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষের ছাদের একাংশ খসে পড়েছে। কক্ষটির ছাদের আস্তর খসে রড বেরিয়ে গেছে। গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হননি। কক্ষটি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।

আঞ্চলিক শাখার কর্মকর্তারা জানান, ওই দিন দুর্ঘটনার সময় দাপ্তরিক কাজে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ বাইরে ছিলেন। এ দুর্ঘটনায় অন্য কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ, অনেক আগেই ওই ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫–এর আঞ্চলিক কার্যালয়টি কারওয়ান বাজারের কাঁচামালের আড়ত ভবনের দ্বিতীয় তলায়। সেখানে ২০১ নম্বর কক্ষে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর বসেন।

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কারওয়ান বাজারের ওই আড়ত ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। এর সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটির মালিকানাধীন আরও ১১টি মার্কেট ভবনকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। এর মধ্যে কয়েকটি ভবন পুরোপুরি ভেঙে ফেলার, কয়েকটি রেট্রোফিটিংয়ের (নির্মিত ভবনের সক্ষমতা বাড়ানো) সুপারিশ দেয় বুয়েট। জরুরি ভিত্তিতে ভবনগুলোর ভার কমাতে বলে বুয়েট। সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের বাজার শাখার তালিকায়ও ওই মার্কেট ভবনকে পরিত্যক্ত দেখানো হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫–এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার দিন আমি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত একটা কর্মশালায় গুলশানের একটি হোটেলে ছিলাম। ওই সময় দুর্ঘটনা ঘটে। হঠাৎ ছাদের একটি অংশ খসে পড়ে।’

নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, বিষয়টি তাৎক্ষণিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ভবনটি পরিদর্শন করেছেন। আপাতত তাঁর কক্ষটি বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্য কর্মকর্তাদের কক্ষে বসে তিনি দাপ্তরিক কাজ করছেন।
মোতাকাব্বীর বলেন, অঞ্চল-৫–এ প্রায় ৪০০ কর্মকর্তা–কর্মচারী কাজ করেন। নতুন কার্যালয়ের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। জায়গা খোঁজা ও স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

ঢাকা উত্তর সিটির প্রকৌশল শাখা থেকে জানানো হয়, অঞ্চল-৫–এর আঞ্চলিক কার্যালয়ের জন্য রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল কাঁচাবাজার–সংলগ্ন খালি জায়গায় ভবন নির্মাণ করা হবে। নথির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ওই খালি জায়গা বর্তমানে করপোরেশনের জিনিসপত্র ডাম্পিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

আঞ্চলিক কার্যালয় স্থানান্তরের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, অঞ্চল-৫–এর কার্যালয়টি দ্রুত স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিতে আগামী মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর সিটির নগর ভবনে সভা বসছে। ওই সভাতেই স্থানান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

ছাদের সিলিং ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

বুয়েটের দেওয়া ২০১৩ সালের তালিকা অনুযায়ী, ঝুঁকিপূর্ণ অন্য ১১টি মার্কেট ভবন হচ্ছে গুলশান-২ নম্বর কাঁচা মার্কেট, গুলশান-২ নম্বর পাকা মার্কেট, খিলগাঁও কাঁচা (তালতলা) মার্কেট, খিলগাঁও সুপারমার্কেট, কারওয়ান বাজার ১ নম্বর মার্কেট, কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেট, কারওয়ান বাজার ২ নম্বর মার্কেট, মোহাম্মদপুর টাউন হল পাকা মার্কেট, মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচা মার্কেট, গাবতলীর প্রান্তিক সুপারমার্কেট, আমিনবাজার ট্রাক টার্মিনাল মার্কেট। এসব ভবন যেকোনো সময় ভেঙে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ২০১০ সালে রাজধানীর ৩২১টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করে। এর মধ্যে ১৪১টি ভবন ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায়।