ডিবির হেফাজত থেকে হাসপাতালে, ৬ দিন পর মৃত্যু

আলাল উদ্দিন
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বাউনিয়ায় ৫ জুন রাতে এক নারী খুন হন। এ ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন আসামি তাঁর স্বামী। পরদিন সন্ধ্যায় ওই বাড়ির দারোয়ান আলাল উদ্দিনকে (৫০) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসে ডিবি পুলিশ। ১০ জুন আলালকে ভর্তি করা হয় পঙ্গু হাসপাতালে। সেখান থেকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।

স্বজনদের অভিযোগ, ডিবি হেফাজতে নির্যাতনের কারণে আলাল মারাত্মক আহত হন এবং পরে মারা গেছেন।

তবে এ বিষয়ে আজ শনিবার রাত পর্যন্ত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। আলালকে কবে ধরে আনা হয়েছে, কত দিন হেফাজতে ছিলেন, কেন তাঁকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করাতে হলো, কোন পরিস্থিতির কারণে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিতে হলো; মৃত্যুর এক দিন পরও এসব বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। ডিবির উত্তরা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বক্তব্য জানতে আজ দিনভর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠানো হয়। কিন্তু তাঁরা সাড়া দেননি।

পরে সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, আলালকে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অসুস্থ হয়ে পড়লে আদালতের নির্দেশে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

তুরাগ থানার পুলিশ সূত্র জানায়, ৬ জুন সকালে বাউনিয়ার একটি বাসা থেকে ফাতেমা আক্তার (৩৩) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ফাতেমার ভাই মুরাদ মিয়া তুরাগ থানায় ফাতেমার স্বামী সাইফুল ইসলামকে আসামি করে মামলা করেন। সাইফুলকে পরে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওই বাড়ির দারোয়ান আলালের ফুফাতো ভাই নেহাজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারীর লাশ উদ্ধারের পর ওই দিন সন্ধ্যায় (৬ জুন) আলালকে ডিবি তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাঁর ব্যাপারে পরিবারকে আর কিছু জানানো হয়নি।

নেহাজ বলেন, ‘শুক্রবার (১৬ জুন) রাত ১০টার দিকে হৃদরোগ হাসপাতাল থেকে আমাকে ফোন করে বলা হয়, আলাল মারা গেছেন। আমরা হাসপাতালে ছুটে যাই। কিন্তু আমাদের লাশের কাছে যেতে দেয়নি; পুলিশ জানায়, ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে লাশ নিতে হবে।’ তাঁর দাবি, ‘আলালের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তাঁকে সন্দেহ করে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা আলালের লাশের ছবি দেখেছি।’

আলালের বাড়ি বাউনিয়া এলাকায়। তাঁর বাবার নাম নূর উদ্দিন। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার হায়দার আলীর বাড়িতে দারোয়ানের চাকরি করতেন।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল সূত্র জানায়, ডিবির পরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমান শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আলালকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে তাঁকে হাসপাতালের সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) পাঠানো হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক তাঁকে মৃত অবস্থায় পেয়েছেন।

হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় বেলাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওই ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর হাসপাতালের পক্ষ থেকে নিকটবর্তী শেরেবাংলা নগর থানাকে জানানো হয়। পরে আইনি প্রক্রিয়া মেনে লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশের সুরতহাল তৈরি করে পুলিশ।

আজ রাত আটটার দিকে আলালের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে লাশের সঙ্গে সুরতহাল প্রতিবেদন পাঠানো হয়নি বলে মর্গ সূত্র থেকে জানা গেছে।