শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ পার্কের দখল-ধ্বংস বন্ধে সমাবেশ

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত সমাবেশছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর গুলশান ২ নম্বর এলাকায় থাকা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি মাঠ ও পার্ক দখলসহ ধ্বংস বন্ধে সমাবেশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের সদস্যরা।

আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে পার্ক এলাকায় এই সমাবেশ হয়। সমাবেশের আয়োজক শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পরিষদ।

স্মৃতি পরিষদের অভিযোগ, গুলশান ইয়ুথ ক্লাব এই মাঠ ও পার্ক ধ্বংস করে কিছু লোকের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে রূপান্তর করছে। মাঠ ও পার্ক নিজেদের দখলে নিয়ে ক্লাবটি বেআইনিভাবে অবকাঠামো বানাচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

সমাবেশে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহসভাপতি ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, গণমুখী চিন্তা থেকে এই জায়গার আগের অবৈধ দখল মুক্ত করে জনগণের টাকায় পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। ডিএনসিসি মেয়রের অনুকূলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থপতিদের দিয়ে নকশা করানো হয়েছে। কিন্তু নকশার ব্যত্যয় করে কোনো গোষ্ঠী, কোনো ক্লাব, যে নামেই হোক একে পাকা করবে, অবৈধ ভবন রেখে সৌন্দর্য নষ্ট করবে, ফটক বন্ধ করে সর্বসাধারণের প্রবেশ বন্ধ রাখবে, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করবে, নিজেদের মতো করে পরিচালনা করবে—এটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করার মতো বিষয়।

ইকবাল হাবিব আরও বলেন, পার্কে পরিবর্তনের আগে এলাকাবাসীর সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। বরং পুঁজিকেন্দ্রিক একদল মানুষ এটি দখলের পাঁয়তারা করছে। তাই সুস্পষ্টভাবে মেয়রের কাছে দাবি, যৌথ পরিচালনার পদ্ধতিতে শিশু-নারী, কিশোর-যুবক, বয়োবৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে এই পার্ক ও মাঠের পরিচালনা করা হোক। এই পার্ক ও মাঠ যাতে সবাই নির্বিঘ্নে ব্যবহার করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

পার্কের নকশা করেছেন বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেশনের (বিআরটিসি) স্থপতিরা। নকশা তৈরির দলে ছিলেন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক জাকিউল ইসলাম। সমাবেশে উপস্থিত হয়ে তিনি বলেন, নকশা করা হয়েছিল পুরো পার্ক ও মাঠের ৮ দশমিক ৮৭ একর জায়গা নিয়ে। কিন্তু পুরো নকশার বাস্তবায়ন হয়নি। পার্কের যে অংশে কাজ হয়েছে, এ অংশটি অর্ধেকের কম নকশার বাস্তবায়ন।

জাকিউল ইসলাম বলেন, পার্ক নির্মাণের আগে অনেক তথ্য-উপাত্ত নেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলা, জরিপ করা, শিশুদের নিয়ে কর্মশালা হয়েছে। একটাই উদ্দেশ্য ছিল, মানুষ যা চায়, নকশা যেন সে রকম হয়। পাশাপাশি পার্কের প্রাকৃতিক পরিবেশ যাতে ঠিক থাকে। পার্ক ও মাঠের পুরো নকশা বাস্তবায়নের আশা করছেন তিনি।

সমাবেশে অন্য বক্তারা বলেন, পার্কের যে জায়গা বৃষ্টির পানি শোষণের জন্য উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়েছিল, সেখানে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে বন্ধ করে ফুটবলের কৃত্রিম টার্ফ বানানো হচ্ছে। এতে পার্কের ঘাসে ঢাকা সবুজ চত্বর ধ্বংস হচ্ছে। নকশা পরিবর্তন করে পার্কটিকে নিজেদের দখলে নিয়েছে একটি ক্লাব। এভাবে পার্ক ও মাঠ দখল করে ইচ্ছেমতো স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। নানাভাবে এর প্রকৃতি ও শ্রেণির পরিবর্তন করা, এটিকে ভাড়া বা ইজারা প্রদানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা আইনের পরিপন্থী।

সমাবেশ সঞ্চালনায় ছিলেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পরিষদের সভাপতি মাহবুবুল করিম। সমাবেশে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা অংশগ্রহণ করেন।