ঢাকার দুই সিটির ৬ খালের সংস্কারকাজের উদ্বোধন
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ছয়টি খালের সংস্কারকাজের উদ্বোধন করা হয়েছে।
আজ রোববার সকালে মিরপুর-১৩ নম্বর সেকশন-সংলগ্ন বাউনিয়া খাল খননকাজের উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা। এর মধ্য দিয়ে ছয় খালের সংস্কারকাজ উদ্বোধন হলো।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মোট ১৯টি খালের সংস্কার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচিকে বলা হচ্ছে ‘ব্লু-নেটওয়ার্ক’। প্রথম ধাপে ৬টি খাল সংস্কার করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা উত্তরের আওতাধীন ৪টি খাল (বাউনিয়া, কড়াইল, রূপনগর ও বেগুনবাড়ি) এবং ঢাকা দক্ষিণের আওতাধীন দুটি খাল (মান্ডা ও কালুনগর)। কর্মসূচির আওতায় পর্যায়ক্রমে অন্য খালের সংস্কারকাজ করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল ঢাকার খাল ও নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করার। ঢাকা শহরকে বাঁচাতে হলে এ কাজই করতে হবে। এটি সময়সাপেক্ষ। কিন্তু শুরু তো করতে হবে। শুরু না করে মহাপরিকল্পনা-বিশ্বপরিকল্পনার মধ্যে আটকে থাকলে কাজ আর শুরু হবে না।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, কাজটি শুধু একটি কর্মসূচির মাধ্যমে করা হচ্ছে। কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। কারণ, সরকারি প্রক্রিয়ায় প্রকল্প নিতে গেলে কম করে হলেও ৮ থেকে ১০ মাস সময় লাগত। তাই যার যতটুকু সামর্থ্য আছে, এখন সেটা দিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে।
খালের প্রাণ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, এখন খালে মশা ছাড়া আর কিছু নেই। খালের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে। খালপাড়ে হাঁটার রাস্তার পরিবর্তে সবজি চাষ, সবুজ ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া খালপাড়ের বাসিন্দাদের সহায়তা প্রয়োজন। কারণ, তাঁরা পয়োবর্জ্যের পাশাপাশি খালে তাঁদের খাট, পালঙ্ক, তোশক, যা আছে, সব ফেলে দেন। এটা কিন্তু আর চলবে না। খালের দুই কিলোমিটার পরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে একটি করে কমিটি করে দেওয়া হবে। তাঁরাই খালের রক্ষণাবেক্ষণ করবেন।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, এমন একটি সময়ে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যখন একটি অরাজক অবস্থা থেকে, ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে বের হয়ে এসে কিছু কাজ করা চেষ্টা করছেন তাঁরা। ১৫ বছর ধরে কীভাবে উন্নয়নের নামে দুর্নীতি করে টাকা পাচার করা হয়েছে, সেটা সবাই দেখেছেন। এর বাইরে এসে যদি কিছু কাজ করতে পারেন তাঁরা, সেই কাজই পরবর্তী সময়ে যাঁরা আসবেন, তাঁরা এগিয়ে নেবেন। রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) ইতিমধ্যে কেরানীগঞ্জে ৯ একরের তোতাই বিল উদ্ধার করেছে। বাকি বেদখল জায়গাগুলোও দ্রুত উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ঢাকা শহর আজ প্রায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে। সমস্যাগুলো দীর্ঘদিনের, যা স্বল্প সময়ে সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সমস্যা সমাধানের রূপরেখা করা হচ্ছে। খালগুলোকে সংরক্ষণ করতে পারলে এ শহরের চিত্র অন্য রকম হতো। তাই ব্লু-নেটওয়ার্কের অধীন ঢাকার ১৯টি খালকে উদ্ধার করা হবে। তিনি আশা করছেন, খুব দ্রুত এই কাজ শেষ করতে পারবেন। আর মানুষ এর সুফল দেখতে পাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনা শেষে তিন উপদেষ্টা বাউনিয়া খালে রাখা একটি খননযন্ত্রে (ফ্লোটিং এক্সকাভেটর) ওঠেন। তাঁরা খননকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।