পূজার পোশাকে ঝলমলে রং
বাঙালি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। ১৪ অক্টোবর ছিল মহালয়া, যে দিন সূচনা হয় দেবীপক্ষের। আজ শুক্রবার মহাষষ্ঠী। রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোতে চলছে পূজার শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলে গিয়ে এমনই আমেজ পাওয়া গেল। কথা হচ্ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপগ্রন্থাগারিক সুপ্তি পোদ্দারের সঙ্গে। জানালেন, অষ্টমীর দিন অন্ততপক্ষে সবাই নতুন পোশাক পরার চেষ্টা করেন।
সুপ্তি পোদ্দার স্বামী ও দুই ছেলেকে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন। জানালেন, কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতের জন্য পোশাক কিনতেই হয়। তাই বিপণিবিতানে প্রায়ই ঢুঁ দেন। তাঁর কথা, পূজার সময় ফ্যাশন হাউসগুলো পরিকল্পনা করে সেভাবে নতুন পোশাক আনে না। এ জন্য তিনি ঈদের সময়ই পূজার কিছু কেনাকাটা করে রাখেন।
তবে বুটিক হাউস দেশালের ভাইস চেয়ারম্যান ইশরাত জাহান বললেন, দুর্গাপূজা ঘিরে পোশাকের রং ও নকশায় বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করা হয়েছে। দুর্গাপূজা মানেই শরৎকাল। পূজার শাড়ি ও ছোটদের পোশাকে সাদা, নীল, কমলা, লাল রং প্রাধান্য পেয়েছে। বাবার সঙ্গে মিলিয়ে ছেলের পোশাক আর মায়ের সঙ্গে মিলিয়ে মেয়ের পোশাক করা হয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় পোশাকের দাম যেটুকু না বাড়ালেই নয়, তা-ই বাড়ানো হয়েছে। তাই দাম ক্রেতার হাতের নাগালে রয়েছে। ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, বগুড়ায় দেশালের দোকানগুলোতে পূজার বিক্রি ভালো চলছে।
ধামরাইয়ের বাসিন্দা চিত্রশিল্পী মানসী বণিক। মানসী বণিক ঢাকার মেয়ে। জানালেন, তিনি ধামরাইয়ের সেনা মার্কেট এবং ঢাকায় আড়ং থেকে ছেলেমেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করেছেন। পূজায় রঙিন শাড়িকে প্রাধান্য দেন তিনি। পঞ্চমীতে বাসন্তী রং, ষষ্ঠীতে গোলাপি রং, সপ্তমীতে হলুদ, অষ্টমীতে লাল, নবমীতে নীল এবং দশমীর জন্য লাল পাড়ের সাদা শাড়ি কিনেছেন। তবে পূজায় যেহেতু একাধিক শাড়ি কেনেন, তাই দামের বিষয়টি মাথায় রাখতেই হয়।
ডেমরার একটি স্কুলের শিক্ষক দীপিকা রানী রায়ের সঙ্গেও কথা হলো বসুন্ধরা শপিং মলে। তিনি এক ছেলে, মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে সঙ্গে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন। জানালেন, স্বামীর জন্য টি-শার্ট পছন্দ হয়েছে, তবে দামের জন্য সেটি কিনবেন কি না, তা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। দীপিকা রানী জানান, পূজার পোশাকে নতুনত্ব পেতে তিনি অনলাইনে বিভিন্ন বুটিক থেকে হাতের কাজ করাসহ দুটি শাড়ি, দুটি সালোয়ার-কামিজ কিনেছেন। স্টাইল ইমপ্রেস নামের একটি বুটিক থেকে তৈরি করা ব্লাউজও কিনেছেন।
অনলাইনে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের প্ল্যাটফর্ম হার-ই ট্রেডের প্রতিষ্ঠাতা ওয়ারেছা খানম প্রীতি প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের ক্রেতা ও বিক্রেতার সংখ্যা ৫১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ঈদ বা পূজার মতো উৎসবগুলোতে বিক্রেতারা তাঁদের পোশাকে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেন। অনেকে অনলাইনে কেনাকাটা করে বিদেশে থাকা স্বজনদের জন্যও উপহার হিসেবে পাঠিয়ে থাকেন।
শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের বিভিন্ন বুটিক হাউস নতুনত্ব আনতে পোশাকে শুভ বিজয়া লিখে মা দুর্গা, ঢোলবাদকের ছবিসহ উৎসবের আমেজ আনার চেষ্টা করেছে। লাল, কমলাসহ ঝলমলে রংগুলো প্রাধান্য পেয়েছে।
উৎসব মাথায় রেখেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পোশাক, ব্যাগসহ বিভিন্ন পণ্যে ছাড় দিয়েছে। ‘গুটিপা’র প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা তাসলিমা মিজি জানান, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে চার হাজার টাকার ব্যাগ কিনলে ১০ শতাংশ ছাড়সহ বিভিন্ন ছাড় পাচ্ছেন ক্রেতারা। ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ক্রেতারা কেনাকাটায় এ সুযোগ পাবেন।
গতকাল ফেসবুকে শুভ্রা রায় নামের এক নারী কেনাকাটা নিয়ে নিজের আক্ষেপের কথা লিখেছেন। পূজায় একটা ব্লাউজ হলেও বানানো উচিত—এ কথা মনে করে শেষ মুহূর্তে দরজির কাছে যান। দরজি রাজিও হয়েছেন। শুধু মজুরিটা চেয়েছেন তিন গুণ।