ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ কিশোর আরাফাতের জানাজা সম্পন্ন

আরাফাতের জানাজার সময় উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বরছবি: সংগৃহীত

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত কিশোর আরাফাত হুসাইন মারা গেছে। গতকাল রোববার রাতে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে। আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার জানাজা হয়।

আরাফাতের জানাজা পড়ান তার বড় ভাই হাসান আলী। এর আগে বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের কাছে খুবই কষ্টের যে আজকে চার–পাঁচ মাস পরেও শহীদ হওয়ার খবর আমাদের কানে আসে এবং আমাদেরকে শহীদ মিনারে আসতে হয়। সত্যি কথা বলতে, এই শহীদ বাবা-মায়ের সামনে দাঁড়ানোর মতো শক্তি আমাদের আর নেই। শহীদ আরাফাত ১২ বছর বয়সে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দেশকে মুক্ত করতে রাস্তায় নেমেছিল। আমাদের সৌভাগ্য হয়নি শহীদ হওয়ার। আমাদের উচিত, যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশকে গঠন করা।’

এ সময় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, ‘এই প্রতিটি মৃত্যু আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে কোনো লক্ষ্য, কোনো স্বপ্নকে সামনে রেখে আমাদের ভাইয়েরা জীবন দিল অকাতরে। আমরা যেন সেই স্বপ্নগুলোর সঙ্গে বিন্দুমাত্র বিশ্বাসঘাতকতা কেউ না করি। আমরা যেন খুনি হাসিনাসহ এই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িয়ে ছিল, তাদের বিচার নিশ্চিত করতে পারি।’

জানাজায় আরও উপস্থিত ছিলেন আরাফাতের বাবা শহিদুল ইসলাম, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী সাইদুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ অনেকেই।

আরাফাত উত্তরা জামিয়া রওজাতুল উলুম মাদ্রাসা পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। গত ৫ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা–পূর্ব থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয় সে। এরপর প্রথমে তাকে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে তাকে সিএমএইচে পাঠানো হয়। সাড়ে চার মাস সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাতে সে মারা যায়।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে মোট ১৩২ শিশু–কিশোর এবং ১১ জন নারী শহীদ হয়েছেন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ সম্প্রতি এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল এ পর্যন্ত ৮৫৮ জনের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে। আরাফাতের মৃত্যুর পর তা বেড়ে দাঁড়াল ৮৫৯ জনে। প্রথম ধাপের খসড়া তালিকায় আহতের সংখ্যা ১১ হাজার ৫৫১ জন।  

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৫ ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, অভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত ৮৬৫ জনের মৃত্যুর তথ্য ডেটাবেজে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৮২ জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।