স্বস্তি আনলেও যানজটে প্রভাব কম মেট্রোরেলের

‘ঢাকার যানজট: মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ের প্রভাব’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা)। ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারিছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর মিরপুর-মতিঝিল রুটের যাত্রীদের জন্য স্বস্তি এনেছে মেট্রোরেল। তবে ঢাকার সামগ্রিক যানজট কমেনি। বহু মাধ্যমভিত্তিক সমন্বিত যোগাযোগব্যবস্থা ছাড়া মেট্রোরেলের পূর্ণ সুবিধা পাওয়া যাবে না। এ জন্য ঢাকার সড়কে মানসম্মত আধুনিক বাসের সংখ্যা বাড়ানো, পথচারীবান্ধব ফুটপাত, ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার সীমিত করা এবং মূল সড়কে রিকশা বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে।

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আজ শনিবার ‘ঢাকার যানজট: মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ের প্রভাব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় নগরবিদ ও পরিবহনবিশেষজ্ঞরা এসব মত দেন। সভার আয়োজন করে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা)।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। এতে বলা হয়, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর প্রভাবে ঢাকার কয়েকটি সড়কে যানজট কিছুটা কমেছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (উড়ালসড়ক) ফলে বিমানবন্দরে যাতায়াত সহজ হয়েছে। তবে ঢাকার সামগ্রিক যানজট কমেনি।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, মেট্রোরেলের সফলতা নির্ভর করবে বহু মাধ্যমভিত্তিক সমন্বিত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর। ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য না দিয়ে বাস, রেল ও গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। পথচারীকে প্রাধান্য দিয়ে হাঁটার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। সাধারণত মেট্রোরেলের প্রধান ব্যবহারকারী হন মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরা। এই শ্রেণির লোকদের মেট্রো স্টেশনের আশপাশে বসবাস নিশ্চিত করার জন্য সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, যানজট কমাতে মেট্রোরেল বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত ব্যবস্থাপনা। দেরিতে হলেও ঢাকায় মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছে। এর সর্বোচ্চ সুযোগ নিতে হবে। একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ির নিবন্ধনের বিষয়ে নতুন চিন্তা করার সময় এসেছে। ঢাকা শহরের পার্কিং ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনাও জরুরি।

ঢাকায় সড়কের অপ্রতুলতা প্রসঙ্গ তুলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, একটি শহরে ২৫ শতাংশ সড়ক থাকার কথা। ঢাকায় রয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৩ শতাংশ সড়কই অযৌক্তিক অপব্যবহার হচ্ছে। ফুটপাতে দোকান, রাস্তার পাশে চটপটি, সবজি বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার সব সমস্যা রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হবে।

ঢাকায় মেট্রোরেলের সফলতা বেশ কয়েকটি বিষয়ের সঙ্গে জড়িত বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকারীদের মেট্রোতে চলাচল নিশ্চিত করতে এখন থেকেই ছোট গাড়ির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকার সড়কে আরও অন্তত এক হাজার আধুনিক বাস নামাতে হবে। মূল সড়ক থেকে রিকশা সরাতে হবে। হাঁটার পথকে বাধামুক্ত করতে হবে। বাস-মেট্রোর সমন্বয়ে যোগাযোগব্যবস্থা গড়তে হবে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান নগর–পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, মেট্রোরেলের বিষয়টি ২০ বছর আগে বাস্তবায়ন করা দরকার ছিল। দেরিতে হলেও কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকার যানজট নিরসনে গণপরিবহনের বিকল্প নেই। এই শহরে চলাচলের মতো ফুটপাত কম। সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে মেট্রোরেলের সুফল ধরে রাখা কঠিন হবে।

ডুরার সভাপতি ওবায়দুর মাসুমের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন নগরবিদ আয়েশা সাঈদ, সাংবাদিক রুহুল আমিন, জয়শ্রী ভাদুড়ী প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন ডুরার সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মোল্লা।