শব্দের ব্যবহারে চিহ্নিত হয় নারীর অবস্থান

মূল প্রবন্ধ পড়ছেন ফিরদৌস আজিম। বাঁ থেকে মোরশেদ শফিউল হাসান, শারমীন মুরশিদ, পারভীন হাসান এবং সোনিয়া নিশাত আমিন। শনিবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির উত্তরসূরী কার্যালয়ে ‘নারীস্বরের নিজস্বতা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে
ছবি: খালেদ সরকার

নির্দিষ্ট শব্দের ব্যবহার থেকে সমাজে নারীর অবস্থান নির্ণয় করা যায়। তেমনি নারীর সাহিত্য রচনার প্রসঙ্গ, বিস্তার থেকেও স্পষ্ট হয় নারীর ভাবনা। এসবই নারীস্বরের নিজস্বতা।

সাংস্কৃতিক সংগঠন উত্তরসূরীর আয়োজনে ‘নারীস্বরের নিজস্বতা’ নিয়ে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এমন অভিমত উঠে এল।

‘নারীস্বর’ ধারাবাহিক বক্তৃতার প্রথম কিস্তির শিরোনাম ‘বাংলা ভাষা: নারী জবানের ভিন্নতা ও বিশিষ্টতা’। শনিবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে উত্তরসূরীর কার্যালয়ে শুরু হয় আলোচনা। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম। আলোচনার প্রথম পর্ব নারীর সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে।

প্রথম পর্বের আলোচনায় উনিশ শতকে নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরীর লেখা ‘রূপজালাল’ উপন্যাসের মিশ্র ভাষা ও আঙ্গিকের প্রসঙ্গ উঠে আসে। ফিরদৌস আজিম বলেন, ‘রূপজালাল’–এ মিশ্র ভাষার ব্যবহার করে একই সঙ্গে গ্রাম ও শহরের ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যে সংযোগ তৈরি করেছিলেন সেই সময়ের একজন নারী লেখক।  

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের সাহিত্যকর্মের উদাহরণ টেনে ফিরদৌস আজিম বলেন, সমাজের নানা রকম ভেদাভেদ ছাপিয়েও বেগম রোকেয়ার লেখায় নারীর অগ্রসর হওয়ার কণ্ঠস্বর স্পষ্ট। বাংলা সাহিত্যে মুসলিম নারী লেখকদের ভাষার নিজস্বতা প্রসঙ্গ নিয়েই তিনি মূলত আলোচনা করেন। একই সঙ্গে শব্দের ব্যবহার নারীর অবস্থানকে কীভাবে নির্ধারণ করে, তা নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন যৌনকর্মী বনাম পতিতা, অভিবাসন শ্রমিক বনাম পাচারকৃত নারী এবং বীরাঙ্গনা বনাম মুক্তিযোদ্ধা শব্দগুলোর প্রসঙ্গ।

ইতিহাসবিদ ও অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন বলেন, বাংলা সাহিত্যে মুসলিম নারীদের মধ্যে প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের লেখা সুলতানার স্বপ্ন (সুলতানাস ড্রিম)। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে বেগম রোকেয়ার লেখায় নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ের প্রতীকী–ভাব।

নারীর অনমনীয় দৃঢ়তার কথা বলতে গিয়ে নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরীর উদাহরণ দেন লেখক ও গবেষক মোরশেদ শফিউল হাসান। তিনি বলেন, নওয়াব ফয়জুন্নেসা ইংরেজদের দেওয়া বেগম উপাধি প্রত্যাখ্যান করে নওয়াব উপাধি আদায় করে নিয়েছিলেন। ইতিহাসের প্রতি অমনোযোগ প্রসঙ্গে মোরশেদ শফিউল হাসান সম্প্রতি রচিত একটি উপন্যাসে ইতিহাসের অসংগতিমূলক বর্ণনার কথা উল্লেখ করেন।  

সভায় সভাপতির বক্তব্যে রাজধানীর সেন্ট্রাল উইমেনস ইউনিভার্সিটির পারভীন হাসান বলেন, ভাষার রাজনীতি নিয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। বীরাঙ্গনা শব্দটি বাদ দিলে একাত্তরে নারীর প্রতি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্মমতা ধরা যাবে না।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনার সময় উত্তরসূরীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদের বক্তব্যে উঠে আসে ভাষার রাজনীতি ও নারীর অবস্থান নির্ধারণের প্রসঙ্গগুলো। সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লুবনা মরিয়ম, আলম খোরশেদ, কাজী সুফিয়া আক্তার, সঙ্ঘমিত্রা ভট্টাচার্য, অরুপ রাহী, অদিতি ফাল্গুনী ও মন্ময় জাফর।