বর্তমান সময় তরুণদের জন্য ‘চ্যালেঞ্জিং’

‘এনগেজিং ইয়ুথ ইন শেপিং বাংলাদেশ’স ফিউচার ইন আ ট্রান্সফর্মিং ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক সেমিনারে আলোচকেরা
ছবি: খালেদ সরকার

বিশ্বব্যাপী অসমতা ও অনিশ্চয়তা তরুণদের মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে কর্মসংস্থান নিয়ে তরুণেরা হতাশ। বর্তমান সময় তরুণদের জন্য ‘চ্যালেঞ্জিং’। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দক্ষতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। প্রযুক্তির ইতিবাচক দিকগুলোকে কাজে লাগিয়ে তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ‘মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২১-২২’ নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে বিশিষ্ট আলোচকেরা এসব কথা বলেন। ইউএনডিপি বাংলাদেশ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট ফর গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) যৌথভাবে সেমিনারটি আয়োজন করে। ‘এনগেজিং ইয়ুথ ইন শেপিং বাংলাদেশ’স ফিউচার ইন আ ট্রান্সফর্মিং ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক সেমিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থার তরুণ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আজ মঙ্গলবার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

বর্তমান সময়কে ‘চ্যালেঞ্জিং’ উল্লেখ করে ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, অসমতা ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে। মানসিক চাপ ও বিষাদের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম অবস্থানে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীদের মধ্যে বেকারত্ব বেশি। তবে পরিবর্তন আনার অসামান্য ক্ষমতা রয়েছে তরুণদের। ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের অংশগ্রহণ জরুরি।

দেশের তরুণদের বড় অংশ এখন রাজনীতিবিমুখ বলে উল্লেখ করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট নাজনীন আহমেদ। তিনি বলেন, অনিশ্চয়তা থেকেই সুযোগের সৃষ্টি হয়। দারিদ্র্য, ক্ষুধা, পানি, পয়োনিষ্কাশন, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, জ্বালানি ও অসমতা—এগুলো অনিশ্চয়তার বড় খাত। রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধনী-দরিদ্র, সামাজিক মর্যাদা, লিঙ্গ ও ধর্মকে ঘিরে বিভেদ বাড়ছে। অন্যের মতকে সম্মান করতে হবে। তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে।

চাকরি খোঁজার শীর্ষস্থানীয় ওয়েব পোর্টাল বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ কে এম ফাহিম মাশরুর বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোয় বিভেদ তৈরিতে সামাজিক মাধ্যমগুলোর ভূমিকা রয়েছে। স্থানীয় অনেক ছোট উদ্ভাবনী উদ্যোগকে দখল করে নিয়েছে বিদেশি বড় কোম্পানি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতই বড়, তাদের নীতিসহায়তা প্রয়োজন। তরুণদের ভাবতে হবে, তারা প্রযুক্তিকে চালাবে, নাকি প্রযুক্তি তাদের চালাবে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক রোহিণী কামাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বেশি পড়ে নারীদের ওপর। কিন্তু এ–বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় প্রান্তিক নারীদের অংশগ্রহণ কম। উপকূলীয় এলাকায় জনগণের নিজ উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও বাঁধ মেরামত করার উদাহরণ রয়েছে। এ ধরনের স্থানীয় উদ্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনের অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে।

সেমিনারের সঞ্চালক বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন বলেন, বর্তমান বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন, যুব কর্মসংস্থান, মানসিক সুস্থতা, দক্ষতা উন্নয়ন ও অসমতার মতো বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন। এসব সমস্যা উত্তরণে উদ্ভাবন, সামাজিক নিরাপত্তা ও সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে।

ইউএনডিপি গত ৮ সেপ্টেম্বর ‘মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২১-২২’ প্রকাশ করে। মানুষের অগ্রগতি তুলে ধরতে জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন সূচক তৈরি করা হয়। এ বছর ১৯১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯তম। ‘আনসার্টেইন টাইমস আনসেটেলড লাইভস’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য—মানব উন্নয়নের এই তিন সূচকই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জলবায়ুসংক্রান্ত আরও কিছু সংকট মানুষকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করেছে।

সেমিনারের দ্বিতীয় পর্বে তরুণ প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়ে ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রিন প্ল্যানেট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তাজরিয়ান আলম বলেন, ওপর থেকে দেখলে সমস্যার গভীরতা অনুধাবন করা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বুঝতে হলে তরুণদের তৃণমূলে যেতে হবে। সম্মিলিত উদ্যোগ ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমেই এই প্রভাব মোকাবিলা করতে হবে।

বেকার তরুণদের দক্ষ করে বিদেশে পাঠানোর মতো পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেই বলে মনে করেন ইয়ুথ পলিসি ফোরামের অ্যাডভোকেসি লিড গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি অতিমাত্রায় প্রবাসী আয় ও তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। আয়ের অন্যান্য খাত খোঁজা জরুরি।  

উদ্ভাবন নিয়ে দেশের তরুণেরা ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফর ডেভেলপমেন্ট ক্লাবের সভাপতি লাব্বি আহসান। তিনি বলেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতা বড় সমস্যা। সুযোগের অপেক্ষায় না থেকে এমনভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে যেন সুযোগই খুঁজে নেয়।