জয়নুল উৎসবকে সাধারণ মানুষ নিজের করে নিয়েছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আয়োজিত জয়নুল উৎসবে একটি স্টলে দর্শনার্থীদের ভিড়। ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বরছবি: আশরাফুল আলম

দেশের আধুনিক চারুকলাচর্চার অগ্রদূত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মদিন উপলক্ষে তিন দিনের যে উৎসব শুরু হয়েছিল, তা শেষ হলো আজ রোববার সন্ধ্যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে এ উৎসব কেবল শিল্পী আর শিল্পবোদ্ধাদেরই নয়, ক্রমে সাধারণ মানুষেরও একটি প্রিয় উৎসবে পরিণত হয়েছে।

তিন দিন ধরে, বিশেষ করে হালকা শীতের বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের যে স্বতঃস্ফূর্ত সমাগম ঘটেছিল, তাতে প্রতিভাত হয়েছে যে জয়নুল উৎসবকে সাধারণ মানুষও নিজেদের করে নিয়েছেন। বিশেষত তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। তাঁরা শিল্প ও কারুসামগ্রী কেনাকাটা করেন, ক্যাম্পাসের মনোরম পরিবেশে আড্ডা দিয়ে, ছবি তুলে প্রাণবন্ত করে রেখেছিলেন পুরো আয়োজন।

দক্ষিণ বনশ্রী থেকে আজ বিকেলে এসেছিলেন একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইমরান হোসেন ও সুরাইয়া আক্তার দম্পতি। সঙ্গে তাঁদের চার বছরের ছেলে সাদাব হোসেন। ওর হাতে খুব সুন্দর রঙিন নকশা করা কাগজের পাখি। এখানে এসে স্টল থেকে কিনেছে। এই দম্পতি জানালেন, বছরের শেষ দিনের বিকেলে বেড়াতে বের হয়ে এখানে চলে এসেছেন। এখানে পরিবেশ ভালো, আয়োজনও চমৎকার। ভালো সময় কাটছে। পাখি হাতে পেয়ে ছেলেও খুব খুশি।  

গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছিল তিন দিনের জয়নুল উৎসব। এবার চারুকলার ৭৫ বছরও পূর্তি হচ্ছে, তাই আয়োজনটি ছিল বেশ বর্ণাঢ্য। প্রথম দিনে শিল্পী কাজী গিয়াস উদ্দীন ও আবদুস সাত্তারকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। শনিবার ছিল জয়নুল স্মারক বক্তৃতা ও ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে সেমিনার।

আজ শেষ দিনে কোনো অনুষ্ঠান ছিল না। তবে অনুষদের প্রতিটি বিভাগের শ্রেণিকক্ষে ছিল বিভাগীয় শিক্ষার্থীদের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী। এ ছাড়া  শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী ছিল জয়নুল গ্যালারির দুটি অংশে। দর্শকেরা ঘুরেফিরে শিল্পকর্ম দেখেছেন।

সামনের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষের বারান্দাজুড়ে ছিল নানা রকমের কারুপণ্য ও শিক্ষার্থীদের শিল্পসামগ্রীর মেলা। বরাবরের মতোই মেলায় সুলভ দামে এসব শিল্পসামগ্রী বিক্রি করা হয়েছে। বেড়াতে এসে ব্যতিক্রমী কিছু কেনাকাটার সুযোগ পেয়ে অনেকেই এসব শিল্পসামগ্রী সংগ্রহ করেছেন। ফলে বেচাকেনা মন্দ হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আয়োজিত জয়নুল উৎসবে স্টলে দর্শনার্থীদের ভিড়। ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর
ছবি: আশরাফুল আলম

জয়নুল উৎসব শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে। চারুশিল্পের সঙ্গে দেশের ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প সামগ্রী নিয়েও এখানে মেলার আয়োজন করা হতো। গত ২০২১ সাল থেকে চারুকলা অনুষদের এই মেলার আয়োজনে সোনারগাঁয়ের লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন সহযোগিতা করছে। ফলে নানা ধরনের কারুশিল্পের সমারোহ ঘটছে মেলায়।

চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী নিসার হোসেন প্রথম আলোকে জানালেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তারা কিছুটা সন্দিহান ছিলেন লোকসমাগম নিয়ে। কিন্তু এত মানুষ এসেছে আর সাধারণ মানুষের মধ্যে শিল্পসামগ্রী কেনার আগ্রহ যেভাবে বাড়ছে, তাতে তাঁরা খুবই আশাবাদী। তিনি বললেন, ‘ধনী মানুষেরাই কেবল শিল্পসামগ্রী কেনেন বলে যেমন প্রচলিত ধারণা ছিল, তা বদলে যাচ্ছে। শিল্প সংগ্রহে মানুষের আগ্রহও বাড়ছে।’ তাঁর মতে, এ উৎসবকে মানুষ নিজের করে নিয়েছে। এমন জনসম্পৃক্ত আয়োজন শিল্পকে জনজীবনের অনুষঙ্গ করে তোলার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।