তাজিয়া মিছিল ধানমন্ডিতে পৌঁছেছে

পুরান ঢাকার হোসেনি দালান থেকে বের হয় তাজিয়া মিছিল
ছবি: আসাদুজ্জামান

পুরান ঢাকার হোসেনি দালান থেকে সকাল ১০টায় শুরু হওয়া তাজিয়া মিছিলটি ধানমন্ডির দুই নম্বর সড়কে পৌঁছেছে। আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে মিছিলটির অগ্রভাগের মানুষ সেখানে পৌঁছান।

ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একরাম আলী মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, শান্তিপূর্ণ মিছিলে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন।

তাজিয়া মিছিলটি ধানমন্ডির দুই নম্বর সড়কে এসে পৌঁছেছে। এর আগে পুরান ঢাকার হোসেনি দালান থেকে শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্যোগে তাজিয়া মিছিল বের হয় সকাল ১০টায়। এরপর মিছিলটি আজিমপুর, নিউমার্কেট হয়ে ধানমন্ডির দুই নম্বর সড়কে গিয়ে শেষ হয়। এই তাজিয়া মিছিল দেখতে নগরীতে রাস্তার দুই ধারে জড়ো হন শত শত মানুষ।

মিছিলে অংশ নেওয়া মোহাম্মদ জুম্মন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছিলেন। আমাদের আজ বড় শোকের দিন, দুঃখের দিন, মাতমের দিন।’

হোসেনি দালান থেকে বের হওয়া এই তাজিয়া মিছিলের আয়োজক হোসেনি দালান ইমামবাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মীর জুলফিকার আলী প্রথম আলোকে বলেন, গত দুটি বছর করোনার কারণে তাজিয়া মিছিল ইমামবাড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা ফিরোজ আলী কাকডাকা ভোরে রাজধানীর লালবাগের হোসেনি দালানে এসে হাজির হন। গায়ে তাঁর কালো রঙের পাঞ্জাবি। বুকের মাঝখানে ডান হাত রাখা। মাথা নিচু করে কেবলই বলছিলেন, ‘ইয়া হোসেন, ইয়া হোসেন।’

কেবল ফিরোজ আলী নন, পুরান ঢাকার ধর্মপ্রাণ হাজারো মুসলমান আজ মঙ্গলবার সূর্য ওঠার আগে হোসেনি দালানে হাজির হয়েছেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী নারী-পুরুষ আসেন সেখানে। তাঁদের পরনে কালো কাপড়, মাথায় বাঁধা কালো পতাকা। আর তরুণদের হাতে কালো পতাকা। মিছিলের সামনে–পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক উপস্থিতি দেখা গেছে।

আজ ১০ মহররম। সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও শোকাবহ একটি দিন আজ। দিনটি পবিত্র আশুরা নামে পরিচিত। হিজরি ৬১ সনের এই দিনে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা কারবালার ময়দানে ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে শহীদ হন।

শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। কারবালার শোকাবহ ঘটনা অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা জোগায়। ১০ মহররমে অনেক ফজিলতময় ঘটনা ঘটেছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নফল রোজা, নামাজ, জিকির-আসকারের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেন। আশুরা উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, তাজিয়া মিছিলে দা, ছুরি, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি বহন এবং আতশবাজি ও পটকা ফোটানো যাবে না।

সরেজমিন দেখা যায়, তাজিয়া মিছিলে যেসব তরুণ অংশ নিয়েছেন, তাঁদের প্রায় সবার হাতেই কালো কাপড় দিয়ে মোড়া বাঁশের লাঠি। লাঠির অগ্রভাবে তরবারিসহ নানা প্রতীক। মিছিলে অংশ নেওয়া হাজারো মানুষ ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ মাতম তুলে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।

মিছিলে অংশ নেওয়া পুরান ঢাকার শোকার্ত জাহিদুল হক বলেন, এই তাজিয়া মিছিল তাঁর পূর্বপুরুষেরা করেছেন। তিনিও করছেন। তাঁর উত্তরসূরিরাও করছে। শোক মিছিলে অংশ নেওয়ার অনুভূতি অন্য কাউকে বোঝানো যাবে না।

প্রায় সাত বছর আগে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে হোসেনি দালানে জেএমবির জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে একজন নিহত হন। আহত হন অনেকে। হামলার এ ঘটনায় হওয়া মামলায় দুজনের সাজা হয়েছে। বাকি ছয়জন খালাস পেয়েছেন।