এবার মানাসলু অভিযানে যাচ্ছেন নিশাত মজুমদার

নিশাত মজুমদার
ফাইল ছবি

হিমালয়ের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদার এবার মানাসলু অভিযানে যাচ্ছেন। হিমালয়ে অবস্থিত মানাসলু পৃথিবীর অষ্টম উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ।
আগামী সোমবার মানাসলু জয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে নেপালের পথে যাত্রা শুরু করবেন নিশাত মজুমদার। এবারের অভিযানে তাঁর সঙ্গে একজন নবীন নারীকে পর্বতারোহীকে নির্বাচন করা হয়েছে।

আজ শনিবার পর্বতারোহী সংগঠন ‘অভিযাত্রী’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ‘ওরিয়ন ট্রেক উইথ নিশাত’ শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মানাসলু শৃঙ্গ অভিযানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে যাওয়া নিশাত মজুমদারের হাতে জাতীয় পতাকা দেওয়া হয়।

মানাসলু অভিযানে নিশাত মজুমদারের সঙ্গী হচ্ছেন প্রজ্ঞা পারমিতা রায় নামের এক নবীন পর্বতারোহী। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
নিশাত মজুমদার ২০১২ সালে এভারেস্ট জয় করেন। এভারেস্টের উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৮ মিটারের বেশি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হিমালয়ে ১৪টি পর্বতের একটি হচ্ছে মানাসলু। এ পর্বতের উচ্চতা ৮ হাজার ১৬৩ মিটার। এ পর্বত আরোহণের স্বপ্নপূরণে একের পর এক পর্বতপ্রেমী সেখানে গিয়েছেন। প্রথমবার ১৯৫৬ সালের ৯ মে একটি জাপানি দল মানাসলুতে সফলভাবে আরোহণ করে। ২৯ আগস্ট নিশাত মজুমদার ও প্রজ্ঞা পারমিতা রায় যাত্রা করবেন। এর মধ্যে প্রজ্ঞা পারমিতা ১৫ দিন পর বেসক্যাম্পে থেকে ফিরে আসবেন। আর মানাসলু জয়ের লক্ষ্যে সেখানে ৪৫ দিন অবস্থান করবেন নিশাত মজুমদার। ৯ অক্টোবর তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, নিশাত মজুমদার শুধু এভারেস্ট জয়ে নয়, অন্য ক্ষেত্রেও নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার এক নাম। নারীদের মনের মধ্যে অনেক পাহাড় জমে থাকে। তাঁরা ভাবেন যে এ পাহাড় হয়তো জয় করতে পারবেন না। কারণ, পথে অনেক বাধা থাকে। নারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সাফল্যের হাতছানি অনেক। জয় করার জন্য পুরো বিশ্ব আছে। তাই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে জয় পাওয়ার জন্য।

সংবাদ সম্মেলনে নিশাত মজুমদার বলেন, এভারেস্টে যাওয়ার আগে যোগ্যতা অর্জনের জন্য তিনি ২০১১ সালে মানাসলু গিয়েছিলেন। সেবার ক্যাম্প-৩ থেকে ফেরত আসেন। তখন থেকেই কখনো না কখনো মানাসলু আরোহণের স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি আরও বলেন, তাঁর কাছে পাহাড়ে যাওয়া মানে বাড়িতে ফিরে যাওয়া। এবার তেমনই এক বাড়িতে যাওয়ার গল্প রচনা করতে চাইছেন। নবীন একজন পর্বতারোহীকে সঙ্গী করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যাচাই-বাছাইয়ের সময় প্রত্যেক মেয়ের মধ্যে হিমালয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। তাঁদের সে স্বপ্নপূরণে আমাদের বড়দের দায়িত্ব রয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আবেদনের ভিত্তিতে প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের পর নয়জন মেয়ের শারীরিক-মানসিক সক্ষমতা পরীক্ষার জন্য সিলেটের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় কালাপাহাড়ে নেওয়া হয়। সেখান থেকে একজনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়।

অ্যান্টার্কটিকাফেরত অভিযাত্রী এবং প্রকৃতিবিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক সভাপতির ভাষণে বলেন, মানাসলু এভারেস্টের সমকক্ষ একটি পর্বত। নিশাত এ পর্বতশৃঙ্গও জয় করবেন, সে প্রত্যাশা রয়েছে। তবে এবার এ অভিযানের বড় একটি বিষয় হচ্ছে, নিশাত মজুমদারের সঙ্গে একজন নবীন পর্বতারোহীকে নির্বাচিত করা হয়েছে। পর্বতারোহণে আগ্রহী সন্তানদের এখন মা-বাবাও সহায়তা করছেন। এ এক নতুন বাংলাদেশ।

পরীক্ষার জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি প্রজ্ঞা পারমিতা রায়। তিনি ভিডিও বার্তায় তাঁকে নির্বাচিত করার কারণে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাঁর মা সোমা শীল। তিনি জানান, তাঁর দুই সন্তানের মধ্যে প্রজ্ঞা বড়। মাস তিনেক আগে প্রথমবার ট্রেকিং শুরু করেন প্রজ্ঞা।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইউসেপ বাংলাদেশের চেয়ারপারসন পারভীন মাহমুদ এবং মানাসলু অভিযানের আর্থিক পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন গ্রুপের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আশফাকুল আলম। নবীন পর্বতারোহী নির্বাচনের যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় কমিউনিটি পার্টনার ছিল নারীদের ভ্রমণ সংগঠন ‘ট্রাভেলস অব বাংলাদেশ-ভ্রমণকন্যা’।